যুক্তরাষ্ট্র থেকে নথিপত্রহীন আরও ৩১ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। ফেরত যাত্রার পুরো সময় তাদের হাতে হ্যান্ডকাফ এবং শরীরের অন্যান্য অংশে শেকল পরানো ছিল, যা নিয়ে মানবাধিকার মহলে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। চলতি বছর এর আগে আরও ২২৬ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসন রোধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। এই নীতির অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশ থেকে নথিপত্রবিহীন বহু মানুষকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া দ্রুত করা হয়। বাংলাদেশও সেই তালিকার একটি অংশ হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক সময়ের একাধিক ফ্লাইট তারই ধারাবাহিকতা।
বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ব্র্যাকের পক্ষ থেকে ফেরত আসা কর্মীদের পরিবহন ও জরুরি সহায়তা প্রদান করা হয়। এই ৩১ জনের অধিকাংশই নোয়াখালী জেলার বাসিন্দা। পাশাপাশি সিলেট, ফেনী, শরিয়তপুর, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার নাগরিকও এই দলে ছিলেন। তারা জানিয়েছেন, প্রায় ৬০ ঘণ্টা ধরে হ্যান্ডকাফ ও শেকল পরেই তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন। ঢাকায় পৌঁছে তাদের শেকল খুলে দেওয়া হয়।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক জানান, ফেরত আসাদের মধ্যে অন্তত সাতজন বিএমইটির ছাড়পত্র নিয়ে প্রথমে ব্রাজিলে গিয়েছিলেন। সেখানে শ্রমিক হিসেবে কাজের অনুমতি পেলেও পরে মেক্সিকো হয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের জন্য আবেদন করলেও আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান হয় এবং ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ব্রাজিলে পাঠানোর নামে যেসব কর্মীকে পথ দেখানো হয় তাদের উল্লেখযোগ্য অংশই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এর পেছনে একেকজনকে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়। অথচ শেষ পর্যন্ত তারা ফিরছেন শূন্য হাতে। এ পরিস্থিতিতে যেসব এজেন্সি এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি জোর দেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অভিযান সাম্প্রতিক সময়ে আরও দ্রুত হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ২৮ নভেম্বর ৩৯ জন এবং ৮ জুন ৪২ জন বাংলাদেশিকে চার্টার্ড ফ্লাইটে ফেরত পাঠানো হয়। একই বছর ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত একাধিক বিশেষ ফ্লাইটে অন্তত ৩৪ বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
মার্কিন আইনে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থানকারীদের আদালতের নির্দেশ বা প্রশাসনিক আদেশের ভিত্তিতে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিধান রয়েছে। আশ্রয়ের আবেদন ব্যর্থ হলে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা নেয়। সাম্প্রতিক সময়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুততর হওয়ায় সামরিক ও চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবহার বাড়ছে, যা অভিবাসন নীতির কঠোর বাস্তবায়নকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।



