থাইল্যান্ড ঘোষণা করেছে যে নিজেদের ভূখণ্ডে অবস্থান নেওয়া কম্বোডীয় বাহিনীকে সরিয়ে দিতে তারা আজ মঙ্গলবার থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। দুই দেশের সীমান্তবর্তী বিতর্কিত এলাকায় নতুন করে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার পর পরিস্থিতি দ্রুত জটিল হয়ে ওঠে এবং উভয় পক্ষই পরস্পরকে দায়ী করছে। এতে গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া অস্ত্রবিরতি কার্যত ভেঙে গেছে।
কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাতভর চলা গোলাগুলিতে তাদের আরও দুই বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এতে সাম্প্রতিক সহিংসতা শুরুর পর থেকে দেশটিতে নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয়ে। অপরদিকে থাই বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এক থাই সেনা নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আজ সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে থাই নৌবাহিনী জানায়, তাদের উপকূলীয় ত্রাত প্রদেশের ভেতরে কম্বোডীয় বাহিনীর উপস্থিতি দেখা গেছে। এ কারণে ওই বাহিনীকে সরিয়ে দিতে সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে। তবে কী ধরনের অভিযান চলছে বা এতে কোন বাহিনী অংশ নিচ্ছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
অন্যদিকে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাতে এক বক্তব্যে বলেছেন, থাইল্যান্ড যেন নিজেদের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের অজুহাতে বেসামরিক গ্রামগুলোর ওপর সামরিক শক্তি প্রয়োগ না করে। তিনি অভিযোগ করেন, তাদের বাহিনী টানা হামলার শিকার হলেও পাল্টা আক্রমণ চালানো হয়নি।
থাই নৌবাহিনী দাবি করেছে, কম্বোডীয় বাহিনী সীমান্ত এলাকায় স্নাইপার ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করছে, প্রতিরক্ষাব্যূহ শক্তিশালী করছে এবং নতুন করে পরিখা খনন করছে। তারা এসব কর্মকাণ্ডকে থাইল্যান্ডের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি ও গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখছে।
এর আগে গত জুলাইয়ে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিন ধরে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। তখন উভয় পক্ষই রকেট হামলা ও ভারী গোলাবর্ষণ চালায়। ওই সংঘাতে অন্তত ৪৮ জন নিহত হন এবং প্রায় ৩ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতি চুক্তি হলেও গতকালকের সহিংসতা ছিল সেই সময়ের পর সবচেয়ে তীব্র।
চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে থাইল্যান্ড তাদের সীমান্তসংলগ্ন পাঁচটি প্রদেশ থেকে ৪ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে। কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে যে দেশটির লক্ষাধিক মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সংঘর্ষে তাদের ১৮ সেনা আহত হয়েছেন। কম্বোডিয়ার সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ৯ জন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।
দুই দেশের মধ্যে ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থলসীমান্ত রয়েছে, যার বহু অংশ এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিরোধপূর্ণ। গত মে মাসে সংঘর্ষে এক কম্বোডীয় সেনার মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। এরপর সীমান্তজুড়ে ব্যাপক সেনা মোতায়েন করা হলে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেও টানাপড়েন তীব্র হয়।



