রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, মূল সন্দেহভাজন হিসেবে যাকে ধারণা করা হচ্ছে, সেই গৃহকর্মীর নাম পরিচয়ও এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে পুরো ঘটনাটি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে মোহাম্মদপুরের একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে ওই নারী ও কিশোরীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী ছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব, আর তাঁর কিশোরী মেয়েটি স্থানীয় একটি প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ত। পরিবারের প্রধান পুরুষ সদস্য রাজধানীর একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন এবং ঘটনার সময় তিনি কাজের উদ্দেশ্যে বাসার বাইরে ছিলেন।
আজ মঙ্গলবার সকালে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, সন্দেহভাজন গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো অজানা। পুলিশ তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারণা, প্রায় বিশ বছর বয়সী ওই গৃহকর্মীই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে। ঘটনার পর থেকেই সে পলাতক এবং তার হদিস পাওয়া যায়নি।
ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গৃহকর্মী বোরকা পরে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেছিলেন। অথচ বেরিয়ে যান নিহত কিশোরীর স্কুলড্রেস পরে। এই অস্বাভাবিক আচরণ তদন্তকারীদের আরও সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, হত্যাকাণ্ডের সময় গ্লাভস পরে ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। কিশোরীর গলায় একাধিক গভীর ক্ষত এবং মায়ের শরীরে বহু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
ফ্ল্যাটের একটি আলমারি এলোমেলো অবস্থায় ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনার পর ভবনের একজন নিরাপত্তাকর্মীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ঘটনাটি শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা নয়, বরং পরিকল্পিত কোনো উদ্দেশ্যের দিকেও ইঙ্গিত দিতে পারে।
পারিবারিক সূত্রের বরাতে জানা যায়, পরিবারের প্রধান পুরুষ সদস্য সকালেই কর্মস্থলে চলে গিয়েছিলেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় ফিরে তিনি স্ত্রী ও মেয়ের মরদেহ দেখতে পান। তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী, চার দিন আগে ভবনের তত্ত্বাবধায়ক ও নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় ওই গৃহকর্মীকে কাজে নেওয়া হয়। গৃহকর্মী নিজের পরিচয় জানতে চাওয়া হলে জানিয়েছিল যে আগুনে তার মা বাবা মারা গেছেন এবং সে নিজেও দগ্ধ হয়েছিল। এসব অজুহাত দেখিয়ে সে কোনো পরিচয়পত্র কিংবা ফোন নম্বর দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গৃহকর্মীর এই অস্বাভাবিক পরিচয় গোপন রাখার বিষয়টি ঘটনাটির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার সম্ভাবনাকে আরও প্রবল করছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য আরও তদন্ত প্রয়োজন। সামগ্রিকভাবে ঘটনাটি এলাকাজুড়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে এবং স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত দোষীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।



