যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল নিয়ে ক্রেমলিনের সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গতকাল রোববার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে জানানো হয়, ওয়াশিংটনের এই নীতিগত অবস্থান বহু দিক থেকেই মস্কোর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিরক্ষা নীতিকে রাশিয়ার এমন প্রকাশ্য স্বীকৃতি দেওয়ার ঘটনা শীতল যুদ্ধ পরবর্তী সময়েও খুবই বিরল।
ওয়াশিংটনের সদ্য ঘোষিত জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থানকে বর্ণনা করা হয়েছে নমনীয় বাস্তববাদ হিসেবে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রকে উনবিংশ শতকের মনরো ডকট্রিন পুনরুজ্জীবিত করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে, যেখানে পশ্চিম গোলার্ধকে ওয়াশিংটনের প্রভাবক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছিল। অর্থাৎ উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাববলয়ে থাকবে এবং ইউরোপীয় শক্তিগুলো সেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকবে।
নতুন কৌশলপত্রে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ইউরোপ এখন ‘সভ্যতার উচ্ছেদ’ সংক্রান্ত ঝুঁকির মুখে। পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল স্বার্থ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে এবং ওয়াশিংটন রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আগ্রহী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে মন্তব্য করতে গিয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে যে সামঞ্জস্য তারা দেখতে পাচ্ছেন, তা অনেক ক্ষেত্রেই রাশিয়ার অবস্থানের সঙ্গে মিলে যায়। বৈশ্বিক রাজনীতির মৌলিক কাঠামো নিয়ে এমন প্রকাশ্য মতৈক্য দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক বিরল দৃষ্টান্ত। যদিও অতীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পারমাণবিক অস্ত্র ফেরত আনার প্রক্রিয়া কিংবা ২০০১ সালের সন্ত্রাসী হামলার পর পারস্পরিক সহযোগিতার মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ওয়াশিংটন ও মস্কো একসঙ্গে কাজ করেছে।
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের দৃষ্টি এখন স্পষ্টভাবে চীনের দিকে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া অধিগ্রহণ এবং ২০২২ সালে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে রাশিয়াকে এক আগ্রাসী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন প্রতিরক্ষা কৌশলে রাশিয়াকে সরাসরি হুমকি আখ্যা না দিয়ে বরং কৌশলগত স্থিতিশীলতায় সহযোগিতার আহ্বানকে মস্কো ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবেই দেখছে।
জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশলে ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলকে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক সংঘর্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নীতিতে বলা হয়েছে, তাইওয়ানকে ঘিরে চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য উত্তেজনা এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সামরিক সক্ষমতা আরও বাড়াবে।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার চাপে মস্কো এশিয়ার দিকে ঝুঁকেছে, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করেছে। অন্যদিকে ইউরোপ রাশিয়ার জ্বালানি নির্ভরতা কমিয়ে নতুন উৎস খুঁজতে শুরু করেছে। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কৌশল পরিবর্তন দুই পরাশক্তির শক্তির রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।
গত মার্চে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মন্তব্য করেছিলেন যে ইতিহাসের শিক্ষা অনুযায়ী রাশিয়া ও চীনের ঘনিষ্ঠতা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অগ্রহণযোগ্য। বর্তমান কৌশলগত আলোচনায় সেই সতর্কতার প্রতিফলনও স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।



