যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের অনাগ্রহ প্রকাশ্যে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল রোববার জানিয়েছেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসানে যে শান্তি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে ইউক্রেনের শীর্ষ নেতৃত্ব যথেষ্ট সম্পৃক্ত না হওয়ায় তিনি হতাশ।
ওয়াশিংটন ডিসিতে কেনেডি সেন্টার অনার্সের রেড কার্পেটে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি ইউক্রেনের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন। তিনি জানান, সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এখনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটি পড়ে দেখেননি। ট্রাম্পের ভাষায়, এতে তিনি বাধ্য হচ্ছেন কিছুটা হতাশা প্রকাশ করতে।
এই পরিস্থিতি সামনে আসে এমন সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন এবং ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের টানা কয়েক দিনের বৈঠক কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে। যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে বাস্তবসম্মত শান্তির লক্ষ্যে তারা আলোচনার পথ খোলা রাখবেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত এবং প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টারা ক্রেমলিনে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর পরপরই মার্কিন এবং ইউক্রেনীয় নেতৃত্বের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়, কিন্তু জানা যায় যে প্রস্তাবটির একাধিক অংশ রাশিয়া গ্রহণ করেনি।
গত মাসে প্রথম প্রকাশিত এই শান্তি-প্রস্তাবটি এরপর কয়েক দফা সংশোধনের মধ্য দিয়ে যায়। সমালোচকেরা বলছেন, পরিকল্পনাটি রাশিয়ার জন্য বেশি সুবিধাজনক হবে, বিশেষ করে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর তাদের ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আলোচনাগুলো গঠনমূলক হলেও সহজ ছিল না। ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনার আগে গতকাল রোববার এক বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেন যে মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা কঠিন হলেও অগ্রগতি হয়েছে। এর আগে শনিবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত এবং হোয়াইট হাউসের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টার সঙ্গে ফোনালাপ করেন।
আজ সোমবার লন্ডনে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির নেতাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ব্রাসেলসেও আরও আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়েছে।
রাতের এক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদের কাছে দেশের মৌলিক অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে এবং যদিও আলোচনা কঠিন ছিল, তা গঠনমূলক পর্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছে।
অন্যদিকে ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর প্রশাসনের সামনে থাকা পররাষ্ট্রনীতির চ্যালেঞ্জগুলো কঠিন। এর মধ্যে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধের সমাপ্তি সবচেয়ে কঠিন বলে তিনি মনে করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ এবং মধ্যস্থতার পরও শান্তিচুক্তি এখনো ধীর গতিতে এগোচ্ছে। কিয়েভের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং রাশিয়া দখল করা অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে মতপার্থক্য এখনো সমাধান পায়নি।
মস্কোর দাবি, তারা আলোচনার দরজা খোলা রেখেছে, তবে কিয়েভ এবং পশ্চিমা দেশগুলোর আচরণকে তারা শান্তি ব্যাহতকারী হিসেবে দেখছে। অন্যদিকে ইউক্রেন এবং তার সমর্থকরা অভিযোগ করছে, রাশিয়া সময়ক্ষেপণ করছে এবং কূটনীতিকে নিজেদের সুবিধা আদায়ের জন্য ব্যবহার করছে।



