যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস বা কাজের জন্য আবেদনকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রক্রিয়ায় এখন থেকে তাদের ‘আমেরিকাবিরোধী মনোভাব’ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড যাচাই করা হবে। এ সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা মঙ্গলবার দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে। এই নীতির কড়াকড়ি অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, অভিবাসন কর্মকর্তারা আবেদনকারীদের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করবেন এবং দেখবেন তারা কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন বা ইহুদিবিদ্বেষী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত কি না। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যও যাচাই করা হবে। এই ধরণের ব্যবস্থা পূর্বে জুন মাসে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় কিছু পরিসরে চালু করা হয়েছিল, যা এখন আরও বিস্তৃতভাবে ‘আমেরিকাবিরোধী কার্যকলাপ’ খুঁজে বের করার ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হবে।
এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি কঠোর করার অংশ হিসেবে ধরা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি বিদেশি শিক্ষার্থী ও অন্যান্য অভিবাসীদের জন্য দেশটিতে ভিসা প্রাপ্তি আরও কঠিন করে তুলবে।
একজন অভিবাসন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি বছরে ছয় হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে যে, শিক্ষার্থী ভিসার জন্য আবেদনকারীদের মধ্যে ‘রাষ্ট্র, সরকারের প্রতিষ্ঠান বা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতি বিরূপ মনোভাব’ আছে কি না, তা দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলো যাচাই করবে।
এক অভিবাসন সংস্থার মুখপাত্র বলেন, “যারা দেশের নীতি ও প্রতিষ্ঠানকে ঘৃণা করে এবং আমেরিকাবিরোধী মতাদর্শ প্রচার করে, তাদেরকে ভিসার সুবিধা দেওয়া উচিত নয়।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, নতুন নীতিমালা কার্যকর করতে সংস্থা সবরকম যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
‘আমেরিকাবিরোধী মনোভাব’ কী?
নতুন নীতিমালায় ‘আমেরিকাবিরোধী মনোভাব’ সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। তবে এতে এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যারা ইহুদিবিদ্বেষী সন্ত্রাসবাদ, ইহুদিবিদ্বেষী সংগঠন বা সংশ্লিষ্ট মতাদর্শ সমর্থন করে।
আইনগত প্রেক্ষাপটে, ১৯৫২ সালের অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের একটি ধারার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, যেখানে কিছু ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব থেকে নিষিদ্ধ করার বিধান ছিল। এর মধ্যে বিভিন্ন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, রাষ্ট্রের মৌলিক ধারণার বিরোধিতা করা ব্যক্তিরা এবং সহিংসভাবে সরকার উৎখাতের চেষ্টা করা ব্যক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত।
ধোঁয়াশা ও উদ্বেগ
নতুন নীতিমালার ঘোষণার পর অনলাইন ফোরামগুলোতে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কোন কর্মকাণ্ড ‘আমেরিকাবিরোধী’ হিসেবে গণ্য হবে। উদাহরণস্বরূপ, আন্তর্জাতিক ঘটনায় প্রতিবাদ প্রকাশ করা, কোনো ব্যক্তির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সমালোচনা বা টেলিভিশন সিরিজের এপিসোড শেয়ার করা—এগুলো কি এই সংজ্ঞার মধ্যে পড়বে?
এক অভিবাসন বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন, “এই পদক্ষেপটি ১৯৫০-এর দশকের ম্যাকার্থিজমের সময়কালের কথা মনে করিয়ে দেয়। তখন কমিউনিজম এবং দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রভাব নিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে বিচারপ্রক্রিয়া চলত।”
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক বলেন, “এই সিদ্ধান্ত প্রয়োগের ক্ষেত্রে গৃহীত ধরণ ও পূর্ব ধারণাগুলো পক্ষপাতমূলক এবং এটি উদ্বেগজনক।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “এতে আবেদনকারীদের নিজেদের মানদণ্ড প্রমাণের জন্য অতিরিক্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে।”