জমির মালিকানা পরিবর্তন বা নামজারি প্রক্রিয়ায় ভোগান্তি ও দালাল নির্ভরতা দীর্ঘদিনের সমস্যা ছিল। ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে অনেক সময় দালালের খপ্পরে পড়তে হতো সাধারণ মানুষকে। টাকা ছাড়া দ্রুত কাজ সম্পন্ন হতো না, আবার টাকা না দিলে মাসের পর মাস ফাইল আটকে থাকত।
এখন সেই চিত্র অনেকটাই বদলেছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল উদ্যোগের ফলে ঘরে বসেই অনলাইনে করা যাচ্ছে নামজারি, খতিয়ান অনুসন্ধান ও দাগ অনুসন্ধানসহ জমি-সংক্রান্ত নানা সেবা। এতে সময়, খরচ এবং হয়রানি—তিনটিই কমেছে।
অনলাইনে নামজারি করার প্রক্রিয়া
জমির মালিকানা পরিবর্তনের আবেদন করা যাচ্ছে land.gov.bd ওয়েবসাইট বা ভূমি সেবা অ্যাপের মাধ্যমে। আবেদন করতে প্রয়োজন হবে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, দলিল নম্বর ও স্ক্যান কপি, খাজনার রসিদ, ওয়ারিশদের তথ্য এবং প্রয়োজনে ওয়ারিশ সনদ। নির্ধারিত ফি সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়।
প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে প্রথমে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে “নামজারি” সেবা বেছে নিয়ে একটি একাউন্ট খুলতে হয়। এরপর আবেদন ফর্ম পূরণ করে দলিলপত্র স্ক্যান করে আপলোড করতে হয়। আবেদন জমা দেওয়ার পর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফি প্রদান করলে অনলাইনে আবেদন স্ট্যাটাস ট্র্যাক করা যায়।
নাগরিকদের অভিজ্ঞতা
অনলাইন সেবার কারণে দালাল ছাড়াই আবেদন করা সম্ভব হচ্ছে। এতে খরচ কমেছে, দুর্নীতি কমছে এবং সেবা গ্রহণ আরও সহজ হয়েছে। অনেক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, আগে যেখানে দালালের হাতে জিম্মি হতে হতো, এখন নিজেরাই অনলাইনে কাজ সম্পন্ন করতে পারছেন।
চ্যালেঞ্জ ও তদারকি
তবে চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে। অনেক ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল, কোথাও কোথাও কর্মকর্তারা সরাসরি অফিসে আসার পরামর্শ দেন। আবার কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারী প্রযুক্তির অপব্যবহার করে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনিয়ম বন্ধে নতুন প্রযুক্তি ও তদারকি ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে।
সহায়তা
নামজারি বা জমি-সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য ও সহায়তার জন্য সরকারি হেল্পলাইন ১৬১২২-এ যোগাযোগ করা যাচ্ছে। পাশাপাশি অভিযোগ জানানো সম্ভব www.land.gov.bd/complain ওয়েবসাইটে।
ডিজিটাল সেবা সাধারণ মানুষের জমি-সংক্রান্ত হয়রানি অনেকটাই কমিয়ে এনেছে। সচেতন নাগরিকদের অংশগ্রহণ এবং দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের আন্তরিকতায় এই পরিবর্তন আরও দৃঢ় হবে—এমন প্রত্যাশা করা হচ্ছে।