উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব রোগ, যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। অনেক ক্ষেত্রেই এর কোনো দৃশ্যমান উপসর্গ দেখা যায় না, কিন্তু শরীরের ভেতরে ধীরে ধীরে ক্ষতি হতে থাকে। সাম্প্রতিক নির্দেশিকায় উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য জীবনধারার পরিবর্তনকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়েছে।
১২০/৮০ সব সময় নিরাপদ নয়
সাধারণভাবে মনে করা হয়, রক্তচাপ ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি মানেই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবে স্বাভাবিক রক্তচাপ বলতে বোঝায় সিস্টোলিক ১২০–এর কম এবং ডায়াস্টোলিক ৮০–এর কম।
- সিস্টোলিক ১২০ থেকে ১২৯–এর মধ্যে হলে তা বাড়তি ধরা হবে।
- সিস্টোলিক ১৩০ বা ডায়াস্টোলিক ৮০–এ পৌঁছালেই সেটি উচ্চ রক্তচাপের পর্যায়ে পড়ে।
রক্তচাপ অস্বাভাবিক হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পাশাপাশি অন্যান্য ঝুঁকির বিষয়গুলোও পরীক্ষা করে দেখা জরুরি।
শুধু বয়স্কদের নয়
অনেকে মনে করেন উচ্চ রক্তচাপ শুধু বয়স বাড়লে হয়। কিন্তু যে কোনো বয়সেই বিভিন্ন কারণে এটি দেখা দিতে পারে। তাই নিয়মিত রক্তচাপ মাপা প্রয়োজন, এবং সঠিক নিয়মে মাপলে তবেই সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে।
স্মৃতিশক্তি রক্ষায়ও দরকার নিয়ন্ত্রণ
গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না থাকলে ভবিষ্যতে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই দীর্ঘমেয়াদে মানসিক সুস্থতার জন্যও এখন থেকেই সতর্ক হওয়া জরুরি।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা সবচেয়ে বড়।
- একজন প্রাপ্তবয়স্ক দিনে সর্বোচ্চ ২৩০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম গ্রহণ করতে পারেন, যা প্রায় এক চা–চামচ লবণের সমান। তবে এর চেয়েও কম খাওয়াই ভালো।
- রান্নার বাইরে অতিরিক্ত লবণ যেমন কাঁচা লবণ, ভাজা লবণ, পিঙ্ক সল্ট বা বিট সল্ট নিরাপদ নয়।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এর পরিবর্তে শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, বীজ, ডাল এবং অপরিশোধিত শস্য খাদ্যতালিকায় রাখা ভালো।
ওজন কমানো জরুরি
যাঁদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, তাঁদের কমপক্ষে ৫ শতাংশ ওজন কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কারও ওজন যদি ৮০ কেজি হয়, তাহলে চার কেজি ওজন কমালেই তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।
জীবনধারার পরিবর্তন
- নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করতে হবে।
- দীর্ঘসময় বসে থাকা কমাতে হবে।
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ধ্যান, শ্বাসের ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম এতে সহায়ক হতে পারে।
- ডায়াবেটিস, থাইরয়েড বা স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো সমস্যার ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, কারণ এগুলো ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।
গর্ভাবস্থায় বাড়তি সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ মায়ের পাশাপাশি গর্ভের সন্তানের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে সিস্টোলিক ১৪০ বা ডায়াস্টোলিক ৯০–এ পৌঁছালে উচ্চ রক্তচাপ ধরা হবে। সন্তান জন্মদানের পরও মায়ের রক্তচাপ পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।