রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া অনেক সময় অজান্তেই শরীরকে বিপজ্জনক অবস্থার দিকে ঠেলে দেয়। এটি হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়, অথচ অনেকেই আগে থেকে বুঝতে পারেন না। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
রক্তে মূলত দুটি ধরনের কোলেস্টেরল থাকে—খারাপ (এলডিএল) এবং ভালো (এইচডিএল)। খারাপ কোলেস্টেরল জমে ধমনিতে সমস্যা তৈরি করে, আর ভালো কোলেস্টেরল শরীর থেকে ক্ষতিকর চর্বি অপসারণে সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, জীবনযাত্রায় কিছু সহজ পরিবর্তন আনলেই ওষুধ ছাড়াই এলডিএল কোলেস্টেরল কমানো সম্ভব।
১. দ্রবণীয় আঁশযুক্ত খাবার খান
আঁশ শরীরের জন্য অপরিহার্য। বিশেষ করে দ্রবণীয় আঁশ শরীরে এক ধরনের জেল তৈরি করে, যা খাবারের কোলেস্টেরল রক্তে শোষিত হতে বাধা দেয়। ওটস, ডাল, চিয়া বীজ, তিসি বীজ প্রভৃতি খাবারে এই আঁশ প্রচুর থাকে। প্রতিদিন ৫–১০ গ্রাম দ্রবণীয় আঁশ গ্রহণ করলে কোলেস্টেরল প্রায় ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।
২. উদ্ভিজ্জ খাবার বেশি রাখুন
খাবারের প্লেটে ফল, সবজি, বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার রাখলে শুধু বৈচিত্র্যই আসে না, এতে থাকা প্রাকৃতিক স্টেরল ও স্ট্যানল কোলেস্টেরল শোষণ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত উদ্ভিজ্জ খাবার গ্রহণ ধমনিকে সুস্থ রাখে এবং অতিরিক্ত কোলেস্টেরল দূর করতে সহায়তা করে।
৩. ক্ষতিকর চর্বি বাদ দিন
প্রক্রিয়াজাত ও ভাজাপোড়া খাবারে থাকা ক্ষতিকর চর্বি (ট্রান্সফ্যাট) শরীরের ভালো কোলেস্টেরল কমিয়ে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ায়। পুষ্টিবিদদের পরামর্শ, এ ধরনের খাবার বাদ দিয়ে জলপাই তেল, অ্যাভোকাডো, আখরোট ও চর্বিযুক্ত মাছের মতো স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ করা উচিত।
৪. নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন জিমে যাওয়া বাধ্যতামূলক নয়। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা বা হালকা ব্যায়ামই যথেষ্ট। এতে শরীরের রক্তপ্রবাহ ঠিক থাকে এবং কোলেস্টেরল যকৃতে পৌঁছে প্রক্রিয়াজাত হয়ে দেহ থেকে বের হয়ে যায়।
৫. পরিশোধিত চিনি ও শর্করা কমান
অতিরিক্ত পরিশোধিত চিনি ও শর্করা শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ায়, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের দৈনিক ক্যালরির বড় অংশ চিনি থেকে আসে, তাঁদের হৃদ্রোগজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। তাই চিনিযুক্ত পানীয়, ক্যান্ডি, পেস্ট্রি, পাউরুটি কমিয়ে দিলে ট্রাইগ্লিসারাইড ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
শেষকথা
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ কোনো একদিনের কাজ নয়; এটি দীর্ঘমেয়াদি অভ্যাসের ফল। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত শরীরচর্চা ও সঠিক জীবনযাপনকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। ধীরে ধীরে এগোলে ওষুধ ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।