বিশ্বজুড়ে নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হওয়া ক্যানসারের তালিকায় জরায়ুমুখের ক্যানসার চতুর্থ স্থানে রয়েছে। তবে সামান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করেই এটি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা সম্ভব, আর প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে সম্পূর্ণভাবে নিরাময়ও করা যায়।
গবেষণা অনুযায়ী, প্রাথমিক অবস্থা থেকে পূর্ণাঙ্গ ক্যানসারে রূপ নিতে প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর সময় লাগে। ফলে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। সাধারণত নারীদের জীবনের দুটি বয়সসীমায় এই রোগ বেশি দেখা দেয়—৩৫ থেকে ৩৯ বছর এবং ৬০ থেকে ৬৯ বছর বয়সে।
লক্ষণ
জরায়ুমুখের ক্যানসারের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো—
- দুর্গন্ধযুক্ত ঋতুস্রাব
- অনিয়মিত মাসিক
- সহবাসের সময় রক্তপাত
- মেনোপজের পর হঠাৎ রক্তক্ষরণ
- তলপেটে ব্যথা
ঝুঁকিপূর্ণ কারণ
- দীর্ঘদিন (১০ বছরের বেশি) জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন
- অল্প বয়সে বিয়ে ও সন্তান গ্রহণ
- ঘন ঘন সন্তান জন্মদান বা পাঁচটির বেশি সন্তান নেওয়া
- বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক
কারণ ও শনাক্তকরণ
এই ক্যানসারের মূল কারণ হিসেবে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসকে (এইচপিভি) দায়ী করা হয়, বিশেষ করে ১৬ ও ১৮ সেরোটাইপ। এটি মূলত যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়।
গ্রামাঞ্চলে ভায়া টেস্ট এবং শহর বা বিশেষায়িত হাসপাতালে প্যাপ স্মিয়ার, লিকুইড-বেজড সাইটোলজি ও কলপোস্কোপির মাধ্যমে রোগটি শনাক্ত করা যায়। সন্দেহ হলে বায়োপসি ও হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষা করতে হয়। পাশাপাশি ক্যানসার কোন স্তরে রয়েছে তা জানতে এমআরআই স্ক্যান করা জরুরি।
চিকিৎসা
রোগের পর্যায় অনুযায়ী চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়—
- প্রাথমিক পর্যায়: সার্জারি, পরবর্তীতে রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি
- অগ্রসর পর্যায়: কেমো-রেডিওথেরাপি, প্রয়োজন হলে পরবর্তী ধাপে সার্জারি
রেডিওথেরাপির দুটি ধরণ রয়েছে:
- ইবিআরটি (EBRT): পেটের বাইরে থেকে প্রয়োগ
- আইসিআরটি (ICRT): জরায়ুর ভেতরে প্রয়োগ
প্রতিরোধের ধাপ
প্রাথমিক প্রতিরোধ: ৯ থেকে ৪৫ বছর বয়সী সুস্থ মেয়ে ও নারীদের এইচপিভি টিকা গ্রহণ করা উচিত। এই টিকা ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর।
দ্বিতীয়িক প্রতিরোধ: ৩০ বছর বয়স থেকে নিয়মিত স্ক্রিনিং করানো প্রয়োজন।
তৃতীয়িক প্রতিরোধ: ক্যানসার শনাক্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা, জটিলতা কমানো এবং রোগীর জীবনমান উন্নত করার ব্যবস্থা নেওয়া।