রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আজ সকালে সংঘটিত ভূমিকম্পে প্রাণহানি, আহত এবং অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে সংঘটিত মাঝারি মাত্রার এই ভূমিকম্পে রাজধানীর কয়েকটি স্থানে ভবনের অংশ ভেঙে পড়া এবং আতঙ্কে দৌড়াদৌড়ির মতো নানা পরিস্থিতি তৈরি হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭ এবং এর উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা এক এএসআই নিশ্চিত করেছেন যে সেখানে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অবস্থায় আরও দশজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুরান ঢাকার আরমানিটোলা এলাকার কসাইটুলি নামের স্থানে একটি আটতলা ভবনের পাশে অবস্থিত দেয়াল ও কার্নিশ থেকে ইট এবং প্লাস্টারের অংশ নিচে পড়ে যায়। সেখানে গরুর মাংস বিক্রির একটি দোকান থাকায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ক্রেতা ও পথচারীরা এ ঘটনায় আহত হন। ফায়ার সার্ভিসের দল পৌঁছানোর আগেই স্থানীয়রা হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং সেখানে চিকিৎসকরা তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফায়ার সার্ভিসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, খিলগাঁও এলাকায় ভূমিকম্পের সময় একটি নির্মাণাধীন ভবনের অংশ ভেঙে পাশের দোতলা ভবনের ওপর পড়ে একজন আহত হন। পাশাপাশি বারিধারা এফ ব্লকের পাঁচ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বারিধারা ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট সেখানে পৌঁছে কাজ শুরু করে। তবে অগ্নিকাণ্ডটি ভূমিকম্পের কারণে ঘটেছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
পুরান ঢাকার স্বামীবাগে একটি আটতলা ভবন আরেকটি ভবনের দিকে হেলে পড়েছে এমন খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সরেজমিনে পরিদর্শনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হলেও বিস্তারিত তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে স্যাটেলাইট ফায়ার স্টেশনের একটি দল সেখানে পরিদর্শনে যায়। পরে তারা জানান যে ভবনটিতে কোনো ক্ষতির চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
কলাবাগান এলাকার একটি সাততলা ভবন হেলে পড়েছে এই অভিযোগের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশন থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস নিশ্চিত করে যে ভবনটি স্বাভাবিক অবস্থায় আছে এবং আতঙ্কে ভুল ধারণা থেকে স্থানীয়রা ফোন করেছিলেন।
এ ছাড়া মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় একটি বাড়িতে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। গজারিয়া ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় একইসঙ্গে এই সব ঘটনার নেপথ্যে ভূমিকম্পের প্রভাব রয়েছে কি না, তা সংশ্লিষ্টরা পর্যালোচনা করছেন। তবে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভূমিকম্পের সময় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় অনেক জায়গা থেকে বিভিন্ন ধরনের কল আসতে থাকে এবং পরিস্থিতি যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
দিনের প্রথম ভাগে সংঘটিত এ ভূমিকম্পটি স্বল্প সময় স্থায়ী হলেও ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় এর প্রভাব সুস্পষ্টভাবে অনুভূত হয়। অনেক ভবন দুলে ওঠায় মানুষজন দ্রুত নিরাপদ জায়গায় বেরিয়ে আসে। বিভিন্ন স্থানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও ফায়ার সার্ভিস বলছে, বেশির ভাগ জায়গায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং জরুরি কল পেলে তারা দ্রুত সাড়া দিয়েছে।



