ওয়েবসাইট নিরাপত্তা ও ইন্টারনেট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ক্লাউডফ্লেয়ার বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক বিপর্যয় কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক সেবা ফিরিয়ে এনেছে। গতকাল মঙ্গলবারের এই বিপর্যয়ের ফলে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য ব্যবহারকারী জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রবেশে বাধার সম্মুখীন হন। এক্স, চ্যাটজিপিটি, ক্যানভা ও গ্রাইন্ডারের মতো বহুল ব্যবহৃত সেবাগুলোতে বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারী হঠাৎ প্রবেশ করতে না পারায় বেশ কয়েক ঘণ্টা বিশ্বব্যাপী অনলাইন কার্যক্রম ব্যাহত হয়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে কোনো ধরনের সাইবার হামলা, নাশকতা বা ক্ষতিকর কার্যক্রমের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ক্লাউডফ্লেয়ার বিশ্বের বৃহত্তম কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্কগুলোর একটি পরিচালনা করে, যা বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশনকে দ্রুত লোড হতে সাহায্য করার পাশাপাশি অতিরিক্ত ট্রাফিক, ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়েল অব সার্ভিস (ডিডস) আক্রমণসহ নানা ডিজিটাল ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। কিন্তু হঠাৎ ঘটে যাওয়া এই ত্রুটির কারণে বিশ্বের মোট ওয়েবসাইটের প্রায় ২০ শতাংশ সাময়িকভাবে অচল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব স্পষ্ট দেখা যায়। বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটসহ বিপুলসংখ্যক সাইটে প্রবেশ করা যাচ্ছিল না, ফলে ব্যবহারকারী ও প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন।
তদন্তে জানা যায়, নিরাপত্তা-সম্পর্কিত হুমকি শনাক্ত ও প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত একটি স্বয়ংক্রিয় কনফিগারেশন ফাইল অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে গেলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারী সফটওয়্যারে হঠাৎ ত্রুটি দেখা দেয়। এ ত্রুটির ফলে প্রতিষ্ঠানটির কয়েকটি মূল সেবা একই সঙ্গে অচল হয়ে যায়, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে বৈশ্বিক ইন্টারনেট ট্রাফিকে। বিশ্বের মোট ওয়েব ট্রাফিকের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ যেখান দিয়ে প্রবাহিত হয়, সে ব্যবস্থায় এমন ত্রুটি সৃষ্টি হওয়ায় অল্প সময়ে বিপর্যয়ের মাত্রা ব্যাপক আকার ধারণ করে।
সমস্যা চিহ্নিত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি জরুরি ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ দল মোতায়েন করে সমাধান প্রক্রিয়া শুরু করে। ক্লাউডফ্লেয়ারের বিবৃতিতে জানানো হয়, সেবার অধিকাংশ অংশ ইতোমধ্যেই স্বাভাবিক হলেও বৈশ্বিকভাবে পুরোপুরি স্থিতিশীল হতে কিছুটা সময় লাগবে। ফলে বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু ব্যবহারকারী সাময়িকভাবে অনিয়মিত প্রবেশ সমস্যার মুখে পড়তে পারেন। অন্যদিকে এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে মার্কিন শেয়ারবাজারেও। লেনদেন শুরুর পরপরই কোম্পানিটির শেয়ারের দর প্রায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ কমে যায়, যা প্রযুক্তি সেবা খাতের বাজার-সংবেদনশীলতার আরেকটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এর এক মাস আগেও বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের প্রযুক্তি সেবা বিঘ্ন দেখা দিয়েছিল। অ্যামাজনের ক্লাউড সেবায় ত্রুটি দেখা দিলে স্ন্যাপচ্যাট, রেডডিটসহ বহু জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কয়েক ঘণ্টা অচল থাকে। দুটো ঘটনার মধ্যেই পর্যবেক্ষকরা বৈশ্বিক ডিজিটাল ইন্সট্রাকচারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা ও হঠাৎ বড় ধরনের সমস্যার সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে নতুন করে ভাবনার প্রয়োজনীয়তা দেখতে পাচ্ছেন।
গতকালের বিপর্যয়ের সময় ব্যবহারকারীরা ডাউনডিটেক্টর নামের প্ল্যাটফর্মে বিপুলসংখ্যক অভিযোগ জমা করেন। প্ল্যাটফর্মটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সর্বোচ্চ পর্যায়ে অভিযোগের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই সংখ্যা কমে প্রায় ২ হাজার ৮০০–তে নেমে আসে। ডাউনডিটেক্টর বিভিন্ন উৎস থেকে ব্যবহারকারীর পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে আউটেজ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে, তাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবহারকারীর সংখ্যা এর চেয়ে ভিন্ন হতে পারে বলে তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।



