Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeকমিউনিটি সংবাদসমাবেশে সংখ্যালঘু নিরাপত্তা ও নির্বাচন দাবি

সমাবেশে সংখ্যালঘু নিরাপত্তা ও নির্বাচন দাবি

নিউইয়র্কের ফ্লোরাল পার্কের গোল্ডেন ইয়ার্স কমিউনিটি সেন্টারে যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৪ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায়। পাঁচ ঘণ্টার এই সভা পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদকের সঞ্চালনায় সম্পন্ন হয়। এতে একশো পঞ্চাশের বেশি সদস্য ও শুভানুধ্যায়ী অংশ নেন। মঞ্চে সভাপতির পাশাপাশি আসন গ্রহণ করেন তিন সভাপতি, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং অন্যান্য দায়িত্বশীলরা।

সভা শুরু হয় সংখ্যালঘু নির্যাতনে নিহতদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও একটি সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে। এরপর বাংলাদেশ থেকে আগত এক সিনিয়র রিপোর্টার ও এক সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর দেশজুড়ে সাম্প্রতিক সংখ্যালঘু নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। তাঁদের বক্তব্যের সঙ্গে সংগৃহীত তথ্যসম্বলিত ছয় পাতার একটি ব্রোশার উপস্থিতদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এতে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সংঘটিত বিভিন্ন সহিংসতার বিবরণ ছিল, যার মধ্যে অভয়নগর, গঙ্গাচড়া, হাজারীগল্লি, পার্বত্য অঞ্চলে বৌদ্ধপল্লীর একশোটি বাড়ি ধ্বংস, খৃষ্টান পাড়ায় অগ্নিসংযোগ এবং গুইমারায় এক নাবালিকা ধর্ষণের প্রতিবাদে তিন মারমা তরুণকে হত্যার তথ্যও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

পরবর্তীতে বিভিন্ন হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ও আদিবাসী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন। তাঁরা দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন রোধে সরকারের ব্যর্থতা ও অনীহা নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একাধিক বক্তা সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পাশাপাশি অতীতে রামু, নাসিরনগর, মুরাদনগর, সাঁথিয়া, নানুয়ার দিঘীর পাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় সংগঠিত নির্যাতনের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে উপস্থাপন করেন। বহু বক্তার অংশগ্রহণে আলোচনায় সংখ্যালঘুদের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। সভায় ছাব্বিশজন নবাগত তরুণ সদস্যের পরিচয়ও তুলে ধরা হয় এবং তাঁদের মতামত জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়।

এরপর সাধারণ সম্পাদক গত এক বছরে বিপন্ন সংখ্যালঘুদের সহায়তায় গৃহীত উদ্যোগের বিবরণ দেন। কোষাধ্যক্ষ উপস্থিত সদস্যদের সামনে আয় ব্যয়ের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এবং দাতা ও নতুন সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সভায় সংগঠনের একজন সভাপতি প্রস্তাবসমূহ পাঠ করে শোনান এবং উপস্থিত সদস্যদের ঐকমত্যে তা গৃহীত হয়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ছিল: সংখ্যালঘু নির্যাতনের দায়ে সংশ্লিষ্টদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অযোগ্য ঘোষণা, সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও প্রতিশ্রুতির দাবি, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি রোধে আন্তর্জাতিকভাবে কঠোর বার্তা প্রেরণ।

আরেক প্রস্তাবে সরকার প্রধানকে সংখ্যালঘু নির্যাতন অস্বীকার না করে অবিলম্বে জাতীয় পর্যায়ে শূন্য সহনশীলতা নীতি ঘোষণা ও প্রয়োগের আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া জুলাই ২০২৪ থেকে সংঘটিত সহিংসতার জন্য দায়ীদের গ্রেপ্তার, বিচার, দণ্ডবিধান এবং ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয়।

সভা আরও দাবি জানায়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে সংখ্যালঘুদের ওপর সম্ভাব্য সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর নজরদারি ও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের কাঠামো গড়ে তোলার জন্য। ২০০১ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটাতে এই প্রস্তুতিকে অত্যন্ত জরুরি বলে সভায় উল্লেখ করা হয়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে সরকার প্রধানকে অনুরোধ করা হয় যাতে সব রাজনৈতিক দলকে একত্রিত করে নির্বাচনের পরপরই সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নে ঐকমত্য তৈরি করা যায়। এতে হেইট ক্রাইম আইন, সংখ্যালঘু কমিশন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় এবং তিন ধর্মীয় ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার বিষয় তুলে ধরা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবিত বিল দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানানো হয়।

সভা আরও অনুরোধ জানায় যাতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সত্যিকার অন্তর্ভুক্তিমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হয়। বক্তারা উল্লেখ করেন, অতীতের মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণের সুযোগ রেখে কেবল একটি দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন আয়োজন বিশ্বসমাজে গ্রহণযোগ্য হবে না।

শেষে ধ্রুপদী সঙ্গীত ও লোকগীতি পরিবেশনার মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সভার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments