ব্রিটিশ জলসীমার সন্নিকটে একটি রুশ গোয়েন্দা জাহাজ প্রবেশ করে সামরিক বিমানের দিকে লেজার নিক্ষেপ করেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। লন্ডনে দেয়া এক ভাষণে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে সতর্ক বার্তা দেন যে শত্রুতাপূর্ণ কার্যকলাপের কারণে ব্রিটেন এখন নতুন ধরনের হুমকির মুখোমুখি।
ভাষণে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান যে ইয়ান্তার নামের জাহাজটি স্কটল্যান্ডের উত্তরে ব্রিটিশ পানিসীমার ধারে অবস্থান করছে এবং এটি মূলত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও ব্রিটেনের সমুদ্রতলের কেবল নেটওয়ার্ক মানচিত্রায়ণে সক্ষম বিশেষায়িত জাহাজ। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়্যাল এয়ার ফোর্সের একটি পোসাইডন-৮ বিমান মোতায়েন করা হয়েছে এবং বিমানটির পাইলটরা জানিয়েছেন যে তাদের ওপর লেজার নির্দেশ করা হয়েছিল।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ ঘটনাকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেন। তিনি রুশ নেতৃত্বের উদ্দেশে কঠোর বার্তা দিয়ে জানান যে তারা এ তৎপরতার ব্যাপারে সম্পূর্ণ অবগত রয়েছে এবং জাহাজটি দক্ষিণের দিকে অগ্রসর হলে ব্রিটেন প্রস্তুত থাকবে।
এদিকে লন্ডনে অবস্থিত রুশ দূতাবাস এ মন্তব্যকে উসকানিমূলক বলে দাবি করে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানায়। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ইয়ান্তার একটি সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণা জাহাজ হিসেবে আন্তর্জাতিক জলসীমায় কাজ করছে এবং ব্রিটেনের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ করার কোনো অভিযোগই ভিত্তিহীন। দূতাবাস অভিযোগ করে যে লন্ডনের অবস্থান ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে এবং অযথা সামরিক উত্তেজনা বাড়াচ্ছে।
ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইয়ান্তার বর্তমানে যুক্তরাজ্যের এক্সক্লুসিভ ইকনমিক জোনে প্রবেশ করলেও দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল সীমার ভেতরে এখনো ঢোকেনি। এই অবস্থানেই জাহাজটি টহল দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, রাশিয়ার এমন কার্যকলাপ ব্রিটেনকে ইউক্রেনকে সহায়তা দেয়া থেকে বিরত রাখতে পারবে না। তিনি আরও জানান যে যুক্তরাজ্য ন্যাটো আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ, গোয়েন্দা তৎপরতা কিংবা ইউরোপজুড়ে নাশকতার হুমকি—সব ক্ষেত্রেই সতর্ক নজরদারি বজায় রাখবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যে ধরনের হামলা, ড্রোন অনুপ্রবেশ এবং নাশকতার আশঙ্কা দেখা গেছে, তা পুরো অঞ্চলেই উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
এ ধরনের ঘটনার জন্য এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাজ্য প্রকাশ্যে ইয়ান্তারের কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বেগ জানালো। সরকার বলছে, জাহাজটি ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর জ্বালানি ও যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত সমুদ্রতল কেবলগুলো মানচিত্রায়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং এটি রাশিয়ার একটি বিশেষ গবেষণা ইউনিটের অধীনে পরিচালিত হয়। তবে এবারই প্রথম সামরিক বিমানের প্রতি সরাসরি লেজার শনাক্ত করা হয়েছে বলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান যে পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় নৌবাহিনীর পর্যবেক্ষণ নীতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে যাতে ইয়ান্তারের গতিবিধি আরও নিবিড়ভাবে অনুসরণ করা যায়। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে ব্রিটেনের সামরিক বিকল্প প্রস্তুত রয়েছে এবং জাহাজটির যেকোনো অস্বাভাবিক গতিপথের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের দৃষ্টিতে এ ঘটনা ন্যাটো অঞ্চলে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী অবস্থানের একটি অংশ মাত্র। ইউরোপকে সংকেত দেয়ার উদ্দেশ্যে এমন কর্মকাণ্ড বেড়েছে বলে মনে করছে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে ইউক্রেনকে সমর্থন দেয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে। পোল্যান্ডে গুরুত্বপূর্ণ রেলপথে বিস্ফোরণের ঘটনাসহ সাম্প্রতিক নাশকতা ইউরোপজুড়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। একই সময়ে ন্যাটোকে পোল্যান্ড ও রোমানিয়ার আকাশে রুশ হামলার পর যোদ্ধা বিমান উড্ডয়ন করাতে হয়েছে।
পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এটিকে নতুন ধরনের হুমকির যুগ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা সতর্কতা আরও জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।



