ওয়াশিংটন (এপি): যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দপ্তর তার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দপ্তরকে অন্য ফেডারেল সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতে শুরু করেছে। দেশের প্রশাসনের ভেতর এটি বর্তমান প্রেসিডেন্টের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রাথমিক ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে তিনি পুরো দপ্তরটি বিলুপ্ত করার কথা বলেছিলেন।
দপ্তরের অধীনে যে অফিসগুলো দেশের স্কুল ও কলেজগুলোর জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেগুলো শ্রম, স্বরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন ফেডারেল দপ্তরের কাছে স্থানান্তর করা হবে। শিক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব পরিবর্তন সত্ত্বেও রাজ্য, স্কুল ও কলেজগুলো যে অর্থ পায়, তাতে কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে বর্তমান কর্মীরা তাদের চাকরি ধরে রাখতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি।
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই প্রেসিডেন্ট দাবি করে আসছেন যে শিক্ষা দপ্তর উদারপন্থী চিন্তাধারায় পরিপূর্ণ এবং এটিকে ভেঙে দেওয়া জরুরি। দপ্তরের নেতৃত্বও গত কয়েক মাস ধরে এর বিভিন্ন দায়িত্ব অন্য দপ্তরে ভাগ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করে আসছিল। জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্ট যে গণছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে, তাতে দপ্তরের কর্মীসংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দপ্তরের প্রধান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা করেছেন যে শিক্ষা দপ্তর বিলুপ্ত হওয়া উচিত এবং অনুদান প্রদান বা নাগরিকদের জিজ্ঞাসার উত্তর দেওয়ার মতো কাজগুলো রাজ্য সরকার বা অন্যান্য ফেডারেল সংস্থা আরও কার্যকরভাবে করতে পারবে।
তবে শিক্ষা দপ্তরের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও অন্যান্য দপ্তরগুলো কতটা প্রস্তুত সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দপ্তরটি প্রতিবছর স্কুল ও কলেজে বিলিয়ন ডলার পাঠায় এবং জটিল ফেডারেল আইন ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করে। এই রূপান্তরটি সরকারের জন্য একটি বড় পরীক্ষা হয়ে উঠতে পারে। দপ্তরটি কি মসৃণভাবে বন্ধ করা যাবে, নাকি এর ফলে গ্রামীণ অঞ্চল, নিম্ন আয়ের পরিবার ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
এখন দেখা যাক শিক্ষা দপ্তর কোন কোন দায়িত্ব সামলাত, সেগুলো কোথায় যাচ্ছে এবং কোন অংশ গ্রাহ্য থাকছে।
স্কুল ও কলেজে অর্থ বণ্টন
যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলগুলো মূলত রাজ্য ও স্থানীয় অর্থায়নে চলে, তবে শিক্ষা দপ্তর ফেডারেল সহায়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কংগ্রেস নির্ধারিত অর্থ বণ্টন অব্যাহত থাকবে। তবে এর বড় একটি অংশ এখন অন্য ফেডারেল সংস্থা থেকে বিতরণ হবে। বিশেষভাবে শ্রম দপ্তর পরিচালনা করবে নিম্ন আয়ের সম্প্রদায়ের জন্য নির্ধারিত টাইটেল ১ তহবিলসহ বেশ কয়েকটি বড় অর্থায়ন কর্মসূচি। প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম ইতোমধ্যে জুন মাসে শ্রম দপ্তরে স্থানান্তর করা হয়েছে।
অন্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত অভিভাবকদের জন্য বিশেষ অনুদান কার্যক্রম এখন স্বাস্থ্য ও মানবসেবা দপ্তর পরিচালনা করবে। বিদেশি ভাষা শিক্ষা তহবিলের দায়িত্ব যাবে পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে। আর নেটিভ আমেরিকান শিক্ষাসহ কিছু বিশেষ শিক্ষা কর্মসূচির দায়িত্ব যাবে স্বরাষ্ট্র দপ্তরে।
ফেডারেল ছাত্রঋণ
ফেডারেল ছাত্রঋণ পোর্টফোলিও পরিচালনা শিক্ষা দপ্তরের অন্যতম বড় দায়িত্ব। বর্তমানে এই ক্ষেত্রটি বড় পরিবর্তনের মুখোমুখি হচ্ছে না। ফেডারেল ঋণ ও পেলের অনুদান স্বাভাবিকভাবেই বিতরণ চলবে এবং শিক্ষার্থীদের ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতাও অপরিবর্তিত থাকবে।
ফেডারেল ছাত্র সহায়তার আবেদনপত্র ফাফসার ওয়েবসাইটও সচল রয়েছে, যা কলেজগুলোতে আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ তৈরি করতে অপরিহার্য। জটিল ফর্মটি পূরণে সহায়তার কাজও এই দপ্তরই সামলাবে। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্বীকৃতি প্রদান কার্যক্রমও শিক্ষা দপ্তরই পরিচালনা করবে।
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সহায়তা
বর্তমানে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলে যে ফেডারেল সহায়তা পাঠানো হয়, তা শিক্ষা দপ্তরই চালিয়ে যাবে। যদিও দপ্তরের প্রধান ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ভবিষ্যতে এই দায়িত্ব স্বাস্থ্য ও মানবসেবা দপ্তরে যেতে পারে।
এছাড়া স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী অধিকার লঙ্ঘনসহ যৌন, বর্ণ বা বংশধারা ভিত্তিক বৈষম্যের অভিযোগ তদন্ত করার দায়িত্বও আপাতত শিক্ষা দপ্তরের কাছেই থাকবে। যদিও এই কাজ বিচার দপ্তরে পাঠানোর প্রস্তাবও এসেছে।
গত মার্চের ব্যাপক ছাঁটাইয়ের পর দপ্তরের নাগরিক অধিকার শাখার কর্মীসংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে অভিযোগ নিষ্পত্তির গতি কমার প্রশ্ন উঠেছে। একই সময়ে নতুন অভিযোগের সংখ্যা বেড়ে চলেছে এবং দপ্তরের তথ্য বলছে নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত মামলার সমাধান উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।



