নিউইয়র্কে আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাব আয়োজিত এক সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতি এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত এই আয়োজনের সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্বে থাকা পদাধিকারী, আর অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এক সাংবাদিক ও লেখক হিসেবে পরিচিত আরেকজন পদাধিকারী।
সেমিনারে বিভিন্ন গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা অংশ নেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এক প্রবীণ সাংবাদিক, যিনি দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে নিউইয়র্কে প্রকাশিত বাংলা পত্রিকাগুলোর সংকটের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, পেশাদারিত্বের অভাব এখন প্রকট হয়ে উঠেছে এবং গণমাধ্যমে লিখিয়ে ও অলিখিয়ে দুই ধরনের সাংবাদিকতার বিস্তার দেখা যাচ্ছে। লিখতে পারেন না, অথচ কেবল কথার জোরে সাংবাদিকতার চেষ্টা করছেন এমন ব্যক্তিদের উপস্থিতি পেশার মান ক্ষুণ্ণ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। একই সঙ্গে দায়িত্বহীন প্রতিবেদন, যাচাই ছাড়া খবর প্রকাশ, সামাজিক মাধ্যমে গুজবের ছড়াছড়ি এবং পকেট মিডিয়ার উত্থানকে গণমাধ্যমের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন প্রবাসী গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা, যার মধ্যে ছিলেন নিউইয়র্কের এক প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাপ্তাহিক এক পত্রিকার সম্পাদক, একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের উত্তর আমেরিকা সংস্করণের নির্বাহী সম্পাদক, প্রবাসভিত্তিক একটি অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক, সাউথ এশিয়ান টাইমস নামক একটি পত্রিকার সম্পাদক, একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিনিধি এবং আরও কয়েকজন সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট। আলোচকরা তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী সমাজ বর্তমানে কঠিন সময়ের মধ্যে রয়েছে এবং এই সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে।
তাঁরা জোর দিয়ে বলেন, সঠিক, নিরপেক্ষ ও দ্রুত তথ্য পরিবেশন করা এখন অত্যন্ত জরুরি। ভুল সংবাদ বা চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো গণমাধ্যমের দায়িত্ববোধের পরিপন্থী। বিশেষ করে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক বাংলা গণমাধ্যম নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা পেশাদার প্রতিষ্ঠান ও সংবাদকর্মীদের জন্য এক বড় পরীক্ষা।
সেমিনারের কী-নোট উপস্থাপন করেন টিবিএন ২৪ টেলিভিশনের পরিচালক ও এক আলোচিত টকশোর উপস্থাপক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও প্রবাসী সমাজের ওপর তার প্রভাব তুলে ধরেন। একই সঙ্গে সংবাদ পরিবেশনে নৈতিকতা, সত্যতা ও যাচাইয়ের গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন।
বক্তারা বলেন, প্রবাসী সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অতীতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এবং সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে প্রয়োজন সাংবাদিকদের ঐক্য, পেশাদারিত্ব, সততা ও দায়িত্বশীলতা। তারা উল্লেখ করেন, সংকট যত গভীর হবে, গণমাধ্যমের দায়িত্ব তত বাড়বে, আর সেই দায়িত্ব পালন করতে হলে সাংবাদিকদের আরও সচেতন হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।



