সকালের জগিং দিনকে প্রাণবন্ত করে তোলার অন্যতম সহজ অভ্যাস। নিয়মিত দৌড় শরীরকে যেমন সুস্থ রাখে, তেমনি মানসিক শক্তি বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে শুধু জগিং করলেই হবে না—জগিং শেষে সঠিক খাবার খাওয়াও অত্যন্ত জরুরি। কারণ, ব্যায়ামের পর শরীর ঠিক কী পাচ্ছে বা পাচ্ছে না, তার ওপর নির্ভর করে শরীর কত দ্রুত শক্তি ফিরে পাবে, পেশি কতটা পুনর্গঠিত হবে এবং সারাদিন কতটা চাঙা থাকা সম্ভব হবে।
জগিং করার সময় শরীর শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে ব্যবহার করে গ্লাইকোজেন, যা পেশিতে সঞ্চিত থাকে। পাশাপাশি পেশির টিস্যুতে সামান্য ক্ষয়ও হয়। তাই দৌড়ানোর পর প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে এমন খাবার গ্রহণ করা দরকার, যা শরীরকে দ্রুত শক্তি ফিরিয়ে দেবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পেশিকে মেরামত করবে। সাধারণত এই পরবর্তী খাবারের উদ্দেশ্য দুটি—গ্লাইকোজেন পুনরুদ্ধার এবং পেশি মেরামত।
প্রথমত, গ্লাইকোজেন পুনরুদ্ধারে প্রয়োজন দ্রুত হজমযোগ্য কার্বোহাইড্রেট। এসব খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা সঠিকভাবে বাড়িয়ে হারানো শক্তি দ্রুত ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
দ্বিতীয়ত, পেশির ক্ষয় সামাল দিতে দরকার পর্যাপ্ত প্রোটিন। প্রোটিন পেশির ভাঙন রোধ করে এবং পেশি পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
জগিংয়ের পর বাংলাদেশের বাস্তবতায় সহজেই পাওয়া যায় এমন কিছু উপকারী খাবার রয়েছে। যেমন—পাকা কলা, যা দ্রুত শক্তির জোগান দেয় এবং শরীরের পটাশিয়াম ঘাটতি পূরণে কার্যকর। একইভাবে ওটস বা সুজি দুধ–দইয়ের সঙ্গে খেলে তা দীর্ঘসময় শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। রুটি বা টোস্টের সঙ্গে মধু, জ্যাম অথবা বাড়িতে তৈরি হালকা তরকারিও হতে পারে ভালো কার্বোহাইড্রেট উৎস।
প্রোটিনের উৎস হিসেবে ডিম হতে পারে সবচেয়ে সহজ বিকল্প। সেদ্ধ বা অমলেট—যেভাবেই খাওয়া হোক, ডিম পেশি পুনর্গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখে। টক দইও জগিং–পরবর্তী খাবার হিসেবে জনপ্রিয়, বিশেষ করে এতে যখন কোনো ফল যোগ করা হয়, তখন একই সঙ্গে কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন পাওয়া যায়।
উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের উৎস খুঁজলে ডাল, ছোলা বা মটরশুঁটি সেদ্ধও ভালো বিকল্প হিসেবে কাজে আসে।
জগিংয়ের পর শরীরের পানিশূন্যতা দূর করাও অত্যন্ত দরকার। দৌড়ানোর সময় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে যে পানি ও ইলেকট্রোলাইট বের হয়ে যায়, তা দ্রুত পূরণ করতে সাধারণ পানি সবচেয়ে উপযোগী। পাশাপাশি পরিমিত পরিমাণে ডাবের পানি, হালকা লবণ মেশানো পানীয় বা খাবার স্যালাইন শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
তবে কিছু খাবার রয়েছে, যেগুলো জগিংয়ের পর এড়িয়ে চলাই ভালো। অতিরিক্ত তেল–চর্বিযুক্ত খাবার—যেমন পরোটা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বা ভাজাপোড়া—হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় এবং শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।
অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয়, যেমন কোমল পানীয় বা প্রক্রিয়াজাত ফলের রস, রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ালেও খুব দ্রুতই তা কমে যায়, যা শরীরে দীর্ঘমেয়াদি শক্তি যোগাতে ব্যর্থ।
ইলেকট্রোলাইট পানীয় নিয়েও সতর্কতা প্রয়োজন। সব ধরনের ইলেকট্রোলাইট ড্রিংক স্বাস্থ্যসম্মত নয়; এতে ঠিক কী উপাদান রয়েছে এবং তা অনুমোদিত কিনা, তা অনেক ক্ষেত্রেই স্পষ্ট নয়। তাই অনিরাপদ বা অজানা ব্র্যান্ডের ইলেকট্রোলাইট পানীয় গ্রহণ না করাই ভালো। তবে পরীক্ষিত ও স্বাস্থ্যসম্মত হলে তা গ্রহণ করা যেতে পারে।
এ ছাড়া অতিরিক্ত ফাইবারযুক্ত খাবার—বিশেষত কাঁচা সবজি—জগিংয়ের পরপরই খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে। যদিও ফাইবার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবুও ব্যায়ামের পর এর অতিরিক্ত গ্রহণ শরীরকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে।
জগিং–পরবর্তী সঠিক খাদ্যাভ্যাস শুধু শক্তি পুনরুদ্ধারই নয়, বরং সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি সঠিক খাবার নির্বাচন করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।



