চিলির জাতীয় রাজনীতিতে চলমান তীব্র উত্তেজনার মধ্যেই দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়িয়েছে। প্রথম দফার ভোটে কোনো প্রার্থীই প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা—অর্থাৎ ৫০ শতাংশের বেশি ভোট—অর্জন করতে না পারায় সংবিধান অনুযায়ী দেশটিকে আবারো ভোটকেন্দ্রে ফিরতে হবে। ডিসেম্বর মাসে এই দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের আয়োজন করা হবে, যেখানে মূল লড়াই হবে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে।
প্রথম দফার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় রোববার। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায় ৮৩ শতাংশ ভোট গণনা সম্পন্ন হওয়ার পর দেখা যায়, বামপন্থী রাজনৈতিক জোটের প্রার্থী জারা পেয়েছেন ২৬.৭১ শতাংশ ভোট। খুব কাছাকাছি ব্যবধানে তাঁর পরেই অবস্থান করছেন অতি ডানপন্থী ধারার রক্ষণশীল নেতা কাস্ত, যিনি পেয়েছেন ২৪.১২ শতাংশ ভোট। ফলে এই দুই প্রার্থীই চূড়ান্ত পর্যায়ে মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন, যা দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
চিলিতে সম্প্রতি অপরাধের মাত্রা এভাবে বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজির মতো গুরুতর অপরাধ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নির্বাচনের পরিস্থিতিকে আরও সংবেদনশীল করে তুলেছে। দেশের অভ্যন্তরে আলোচনায় সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে বিদেশি অপরাধী চক্রের বিষয়টি। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, সীমান্ত দিয়ে প্রবেশকারী কিছু অপরাধী চক্রই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী, ফলে নির্বাচনী প্রচারণায় নিরাপত্তা ইস্যুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় পরিণত হয়েছে।
৫৯ বছর বয়সী ডানপন্থী প্রার্থী কাস্ত দেশের সীমান্ত নিরাপত্তাকে তাঁর প্রচারণার মূল কেন্দ্রে রেখেছেন। তিনি বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলীয় দরিদ্র দেশগুলো থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে চিলি–বলিভিয়া সীমান্তজুড়ে একটি শক্তিশালী প্রাচীর, সীমান্তবেড়া এবং এমনকি পরিখা নির্মাণ—যার মাধ্যমে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ করা হবে বলে তিনি দাবি করেছেন। তাঁর মতে, এই পদক্ষেপই চিলির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে পুনরুদ্ধারে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
অন্যদিকে, ৫১ বছর বয়সী জারা, যিনি বিদায়ী প্রশাসনের সময় শ্রমমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, নিরাপত্তা ও অর্থনীতি—দু’টি বিষয়কে সমান গুরুত্ব দিয়ে তাঁর পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন। তিনি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন। পাশাপাশি সংঘবদ্ধ অপরাধ মোকাবিলায় ব্যাংকিং সেক্টরের গোপনীয় নীতিমালা শিথিল করার প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে অপরাধচক্রের আর্থিক লেনদেন সহজেই অনুসন্ধান করা যায়।
এছাড়া, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার সমস্যাকে গুরুতর সংকট হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি তার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর মতে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যস্থিতি বজায় রাখা এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতা ফিরিয়ে আনাই হবে তাঁর সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
চিলির এই নির্বাচন এখন শুধু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয় নয়—বরং দুই ভিন্ন মতাদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গির সংঘাত। একদিকে সীমান্ত সুরক্ষা ও কঠোর নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া একটি শক্তিশালী রক্ষণশীল অবস্থান, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমাধানের ওপর গুরুত্ব দেওয়া মধ্য-বামপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি। ভোটারদের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে কোন পথে এগোবে চিলির ভবিষ্যৎ।
ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দ্বিতীয় দফার নির্বাচন নিয়ে দেশে এখন ব্যাপক আলোচনা চলছে। সাধারণ মানুষও অপেক্ষা করছে—কোন প্রার্থী তাদের বর্তমান সংকট ও উদ্বেগের সঠিক সমাধান দিতে পারবেন।



