প্রাচীন মিথে ইকারাসের গল্প অনেকেই জানেন—মোমের ডানা নিয়ে সূর্যের খুব কাছে চলে গিয়ে যার পতন হয়েছিল। আধুনিক সময়েও সেই পৌরাণিক কাহিনির এক স্বপ্নময় প্রতিচ্ছবি যেন নতুন করে উঠে এসেছে এক ফটোগ্রাফারের তোলা বিশেষ একটি ছবিতে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় এক স্কাইডাইভার মাত্র এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশে সূর্যের সামনের অংশ অতিক্রম করার সময় সেই দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করেন এক অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার। সূর্যের তপ্ত, অগ্নিময় পৃষ্ঠের বিপরীতে একটি মানব অবয়ব যখন কালো ছায়ার মতো নেমে আসছিল, তখন সেই মুহূর্তই পরিণত হয় এক অসাধারণ দৃষ্টিবিভ্রমে।
ফটোগ্রাফারটি সূর্য ও চাঁদের সূক্ষ্ম আলোকচিত্র ধারণের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এই বিশেষ ছবি ধারণের জন্য তিনি কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সূর্যের ছবি ধারণ করা এমনিতেই অত্যন্ত জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, তার ওপর চলমান একটি মানবদেহ বা বিমানকে একই ফ্রেমে রাখা আরও কঠিন। সূর্যের অবস্থান, স্কাইডাইভারের পতনের পথ, ছোট বিমানের গতিপথ এবং ক্যামেরার নিখুঁত অ্যাঙ্গেল—সব মিলিয়ে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই এই অসাধারণ মুহূর্ত তৈরি হয়।
ফটোগ্রাফারের মতে, পুরো কাজটিই ছিল প্রায় অসম্ভব ধরনের একটি প্রচেষ্টা। তবে চূড়ান্ত ছবিটি যে অনুভূতি তৈরি করেছে, তা এককথায় অতুলনীয়। স্কাইডাইভার, যিনি একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও সংগীতশিল্পী, ছবিতে দেখা গেছেন সূর্যের উজ্জ্বল হলদে পৃষ্ঠের বিপরীতে একটি নিখুঁত কালো সিলুয়েট হিসেবে। যদিও সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল দূরে, তবুও ক্যামেরায় ধরা পড়া দৃশ্যে মনে হয়েছে যেন সামান্য দূরত্বেই দাঁড়িয়ে আছে সেই মানব অবয়ব।
বহু দর্শক ছবিটিকে ইকারাসের গল্পের সঙ্গে তুলনা করছেন। আগুনের মতো জ্বলন্ত সৌর পৃষ্ঠের বিপরীতে একটি মানব ছায়ার উপস্থিতি ছবিটিকে করেছে আরও নাটকীয়। মনে হয়েছে যেন কেউ মহাশূন্যে ভেসে নিচের দিকে পতিত হচ্ছে।
যখন স্কাইডাইভার ৩ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতা থেকে নেমে আসা শুরু করেন, তখন প্রায় ১০ সেকেন্ড সময় পাওয়া গেছে ছবিটি ধারণ করার জন্য, প্যারাসুট খোলার আগে। ফটোগ্রাফার একটি বিশেষ এইচ–আলফা ক্যামেরা এবং একটি ১,৬০০ মিলিমিটার এক্সপোজার দিয়ে ছবিটি ধারণ করেন।
এই অলৌকিক দৃষ্টিবিভ্রম তৈরি হওয়ার মূল কারণ ছিল দূরত্ব ও ক্যামেরার অবস্থান। স্কাইডাইভার লাফ দিয়েছিলেন বিমান থেকে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ ফুট ওপর থেকে, এবং ফটোগ্রাফার অবস্থান করেছিলেন প্রায় আট হাজার ফুট দূরে। ফলে বাস্তবে স্কাইডাইভার সূর্যের কাছে না থাকলেও ক্যামেরার সংকীর্ণ ফিল্ড অব ভিউয়ের কারণে মনে হয়েছে তিনি যেন সূর্যের ওপর দিয়ে নেমে আসছেন।
ছবির জন্য বিমানটিকে সঠিক অবস্থানে আনতে ছয়বার চেষ্টা করতে হয়। কারণ মাত্র একবারই সুযোগ ছিল স্কাইডাইভারকে নিখুঁতভাবে সূর্যের সামনে এনে ফ্রেমবন্দী করার। শেষ পর্যন্ত মনিটরে ক্ষুদ্র অবয়বটি সূর্যের আলোর সঙ্গে মিলিয়ে এক চমৎকার মুহূর্ত তৈরি করতে সক্ষম হন ফটোগ্রাফার।
অনেকেই এই ছবিকে আধুনিক এক পৌরাণিক প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখছেন। গ্রিক মিথের ইকারাসের গল্প যেন নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে ফিরে এসেছে এই আলোকচিত্রে। বাস্তব আর কল্পনার সীমারেখা মিলিয়ে এই ছবিটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।



