দশক ধরে ইউরোপের গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণ ছিল অভিজ্ঞ পর্যটকদের জন্য এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। প্যারিস ভ্রমণকে কখনো কেউ “সুন্দর” বলে অভিহিত করলেও, সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণ যেন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।
একজন ভ্রমণ উদ্যোক্তা জানান, তার আগস্টের প্যারিস ভ্রমণ “সুন্দর” নয়, বরং তীব্র গরম এবং ভিড়ের কারণে ক্লান্তিকর ছিল। তিনি বলেন, “মূল আকর্ষণগুলোতে টিকিট পাওয়া যায়নি, এবং যেগুলো পেয়েছি সেগুলোও অনলাইন প্রতারণা। প্রতিটি মুহূর্তে ছায়ার খোঁজ এবং পানি কেনার প্রয়োজন ছিল।” এ অভিজ্ঞতা শুধু তার জন্যই নয়; এটি একটি ইঙ্গিত যে ইউরোপের গ্রীষ্মকালীন পর্যটন এখন আর স্বপ্নের মতো নেই, বরং একটি কঠিন পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনেক উচ্চবিত্ত পর্যটক যারা জুলাই-আগস্টে ইউরোপে যেতেন, তারা এখন তাদের ভ্রমণ সময়সূচি শরৎকাল পর্যন্ত পিছিয়ে দিচ্ছেন। গরম এবং ভিড় এড়াতে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের পর্যটকরা শরৎকালকে নতুন শীর্ষ মৌসুম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। ভ্রমণকারীরা বলছেন, গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা, ওভারট্যুরিজম এবং কোভিড পরবর্তী সময়ের শান্ত ভ্রমণের আকাঙ্ক্ষা মূল কারণ।
২০২৪ সালে এই প্রবণতা শুরু হলেও, এখন এটি দৃঢ় হয়ে উঠেছে। মধ্য সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরেও পর্যটকরা এখনও সমুদ্র স্নানের সুযোগ উপভোগ করতে পারেন, যা পূর্বে সীমিত ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইউরোপের দ্রুত তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং দাবদাহে ভ্রমণ করা কঠিন হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের গ্রীষ্মে দাবদাহ এবং দাবদাহজনিত অগ্নিকাণ্ডের কারণে শরৎকালীন ভ্রমণ আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
শরৎকালকে ইউরোপের “গোপন সিজন” বলা হলেও, এ সময় ক্রমেই পিক সিজনের মতো হয়ে উঠছে। ভ্রমণ সংস্থা এবং বুকিং প্ল্যাটফর্মের তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন পর্যটকেরা ইউরোপে শরৎকালীন ভ্রমণে ২৫% বৃদ্ধি দেখাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী ডলারের কারণে আরও বেশি মানুষ সমুদ্রপারে ভ্রমণ করছেন।
সারা ইউরোপে পর্যটক সংখ্যা বেড়েছে। ইউকে-ভিত্তিক ট্রাভেল এজেন্ট নেটওয়ার্কের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের বিক্রিতে ২৮% বৃদ্ধি হয়েছে। ভ্রমণ সংস্থাগুলোর জরিপে দেখা গেছে, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ গ্রাহক এখন “শোল্ডার সিজন বা অফ-পিক” ভ্রমণ বেছে নিচ্ছেন।
যদিও শরৎকাল অনেক সময় গরম ও আগুন এড়াতে সহায়ক, কিন্তু একই সময়ে অনেকেই এই সময় ভ্রমণে যাচ্ছেন, ফলে ভিড় এখনও বেশি। গ্রীস, ইতালি ও ক্রোয়েশিয়ায় দেখা গেছে, শরৎকালেও ভ্রমণকারীর সংখ্যা সর্বাধিক। উদাহরণস্বরূপ, ফ্লোরেন্সের উফিজি গ্যালারিতে সেপ্টেম্বর মাসে ২৬% বেশি দর্শক আসে। এছাড়া অ্যাথেন্সে নভেম্বরেও পর্যটক সংখ্যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
তবে ভ্রমণকারীরা আগাম বুকিং করলে খরচ কমাতে পারেন। সেপ্টেম্বর মাসে আগাম বুকিং করা হোটেলগুলোর দাম জুলাই-আগস্টের তুলনায় প্রায় ৫০% কম ছিল। এছাড়া, এ সময়ে এয়ারফেয়ারও উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
ইতিহাসগতভাবে ইউরোপের শীর্ষ মৌসুম কেবল গ্রীষ্মকালীন ছিল, কিন্তু এখন শোল্ডার সিজনও সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনেক পর্যটক গ্রীষ্মকাল এড়িয়ে শরৎকাল বা বসন্তকাল বেছে নিচ্ছেন, যাতে তারা শান্তভাবে শহর ও সমুদ্র উপভোগ করতে পারেন। অভিজ্ঞ গাইডরাও ক্রমশ ভ্রমণকারীদের জন্য কম ভিড়ের সময় সূচি ঠিক করছেন।
পরিশেষে, ভ্রমণকারীদের জন্য মূল বার্তা হলো, ইউরোপে এখন গ্রীষ্মকাল আর স্বপ্নের মতো নয়। গরম, ভিড় এবং আগুনের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে শরৎকাল বা অন্য অফ-পিক সময় বেছে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। পরিকল্পিত ও সতর্ক ভ্রমণই নিরাপদ ও আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।



