যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এপস্টিন-সংশ্লিষ্ট নথি প্রকাশ নিয়ে তীব্র আলোচনার মধ্যে হঠাৎ করেই নিজের অবস্থান পাল্টে ফেলেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক মন্তব্যে তিনি রিপাবলিকান সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, এপস্টিন ফাইল প্রকাশে সমর্থন দিতে এবং বিষয়টি “ডেমোক্র্যাটদের তৈরি একটি বিভ্রান্তি” বলে উল্লেখ করেন। কয়েকদিন আগেও তিনি এই প্রচেষ্টাকে অবিশ্বস্ত বলে দাবি করেছিলেন।
এই সপ্তাহে প্রতিনিধি পরিষদে যে ভোট অনুষ্ঠিত হবে, সেটির মাধ্যমে বিচার বিভাগকে এপস্টিন-সংক্রান্ত সকল নথি প্রকাশে বাধ্য করার প্রস্তাব সামনে আসছে। ভোটের আগে রিপাবলিকানদের মধ্যে ব্যাপক ভাঙনের আশঙ্কা তৈরি হয়, যার প্রেক্ষিতেই ট্রাম্পের এই অবস্থান পরিবর্তন বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
সম্প্রতি দুই দল থেকে দুটি ভিন্ন অঙ্গরাজ্যের দুই কংগ্রেস সদস্যের যৌথ প্রচেষ্টায় একটি ডিসচার্জ পিটিশনের মাধ্যমে এ নথি প্রকাশের প্রস্তাব ভোটের আওতায় আনা হয়। তারা জানান, রিপাবলিকানদের মধ্যেও বিষয়টিকে ঘিরে সমর্থন বাড়ছে এবং প্রস্তাবটি সহজেই পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রিপাবলিকান সদস্যদের একজন বলেন, অন্তত ১০০ জনের বেশি রিপাবলিকান এই প্রস্তাবে ট্রাম্পের বিপরীতে গিয়ে সমর্থন দিতে পারেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভোটে এমন একটি সংখ্যা পাওয়া যাবে যা ভেটো অতিক্রম করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা তৈরি করবে।
এর আগে দলীয় নেতৃত্বও একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল—অনেক রিপাবলিকান ট্রাম্পের অবস্থান থেকে সরে এসে নথি প্রকাশে ভোট দিতে প্রস্তুত। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারও বিষয়টিকে বড় কোনো বিতর্ক নয় বলে উল্লেখ করেছেন, কারণ ইতোমধ্যে একটি কমিটি হাজার হাজার নথি সংগ্রহ করে প্রকাশ করেছে। তিনি আরও বলেন, “এটি শেষ করা উচিত, কারণ গোপন করার কিছুই নেই।”
ভোটের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে মঙ্গলবার, ঠিক সেই সময় যখন নতুন করে এপস্টিন-সংশ্লিষ্ট বহু ইমেইল জনসমক্ষে আসে। কিছুদিন আগেই ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি বিচার বিভাগকে নির্দেশ দেবেন যেন এপস্টিনের সঙ্গে সম্পর্কিত রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তির ভূমিকা তদন্ত করা হয়। বিচার বিভাগের প্রধান সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের একজন অ্যাটর্নিকে দায়িত্ব দেওয়ার ঘোষণা দেন, যা সমালোচকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে—কেউ কেউ মনে করেন, প্রশাসন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিষয়টিকে ব্যবহার করতে পারে।
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে রিপাবলিকানদের মধ্য থেকে ভিন্নমতও উঠে এসেছে। একজন জ্যেষ্ঠ রিপাবলিকান বলেন, ট্রাম্প মূলত এমন কিছু ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের রক্ষা করতে চাইছেন, যারা তার রাজনৈতিক সমর্থক বা ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তিনি সতীর্থদের মনে করিয়ে দেন, এই ভোটের রেকর্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক সময়সীমার চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হবে।
ডেমোক্র্যাট দলের পক্ষ থেকেও সমর্থন দেখা গেছে। এক সদস্য জানান, তিনি আশা করছেন অন্তত ৪০ জন রিপাবলিকান এই সপ্তাহে নথি প্রকাশে সমর্থন দেবেন। তিনি অভিযোগ করেন, ট্রাম্প রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিজের রাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করছেন।
এপস্টিন নথি প্রকাশকে ঘিরে ট্রাম্প ও একসময়ের ঘনিষ্ঠ রিপাবলিকান সদস্যের মধ্যেও সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। ওই সদস্য দাবি করেছেন, এই একটি ইস্যুর কারণেই তাদের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, “যদি কোনো অপরাধে তিনি জড়িত না হন, তবে বিষয়টি প্রকাশে এত আপত্তি কেন?”
প্রস্তাবটি প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হলেও সেনেটে এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। সেনেটের একজন শীর্ষ নেতা ইতোমধ্যে বলেছেন, বিচার বিভাগ কয়েক হাজার পৃষ্ঠার নথি প্রকাশ করেছে, তাই আলাদা করে বিল পাস করার প্রয়োজন নেই। তবে রিপাবলিকানদের একজন আশা প্রকাশ করেন, প্রতিনিধি পরিষদে বড় সংখ্যক ভোট পাওয়া গেলে সেনেটও চাপের মুখে পড়বে।



