হার্ট ফেইলর থেকে হাসপাতাল ছাড়ার পর রোগীর সুস্থতার যাত্রা থেমে যায় না। বরং ঠিক এই সময়েই জীবনযাত্রা, বিশেষ করে খাদ্যাভ্যাস নিয়ে সচেতনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই সঠিক খাবারের অভাব পুনরায় অবনতি বা দ্রুত রিল্যাপ্সের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট ফেইলরের কারণে সদ্য হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের বাড়িতে ফিরে যদি স্বাস্থ্যসম্মত, চিকিৎসাগত দিক থেকে নির্ধারিত খাবার বা তাজা শাকসবজির বাক্স সরবরাহ করা হয় এবং সেই সঙ্গে পুষ্টিবিষয়ক পরামর্শ দেওয়া হয়, তাহলে তাদের জীবনযাত্রার মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া কার্ডিওলজি ও জেরিয়াট্রিক বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ গবেষক জানান, ভুল খাদ্যাভ্যাস রোগীদের অবস্থাকে দ্রুত খারাপ করতে পারে। হাসপাতালে ফিরে আসার ঝুঁকি কমাতে সোডিয়াম, চিনি ও বাড়তি চর্বিযুক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ করা অপরিহার্য। সঠিক পুষ্টি শরীরকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে এবং পুনরুদ্ধারের গতি বাড়ায়।
গবেষণায় অংশ নেন ১৫০ জন প্রাপ্তবয়স্ক রোগী, যারা সদ্য তীব্র হার্ট ফেইলরের কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। অংশগ্রহণকারীদের তিনটি দলে ভাগ করা হয়।
-
একদলকে সরবরাহ করা হয় চিকিৎসাগতভাবে নির্ধারিত খাবার এবং ডায়েটিশিয়ানের নিয়মিত পরামর্শ।
-
আরেকদলকে দেওয়া হয় তাজা শাকসবজির বাক্স এবং একই পরামর্শ।
-
তৃতীয় দল কেবল পরামর্শ পেলেও কোনো খাবার সরবরাহ করা হয়নি।
এই তিনটি প্রোগ্রামই চলেছে ৯০ দিন ধরে।
এর পাশাপাশি, খাদ্য সরবরাহ দুই ধরনের নিয়মে পরিচালিত হয়—একটি দলে রোগীরা ওষুধ সংগ্রহ এবং চিকিৎসকের ফলো-আপে উপস্থিত থাকলেই খাবার পেতেন। অন্য দলে শর্ত ছাড়াই খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেখা হয়, চিকিৎসা নির্দেশনা মানায় উৎসাহ তৈরি করতে খাদ্য সরবরাহ কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।
৯০ দিনের শেষে দেখা গেছে, যেসব রোগী খাবার পেয়েছেন, তারা কেবল পরামর্শ পাওয়া রোগীদের তুলনায় ভালো মানের জীবনযাপন করেছেন। দৈনন্দিন কাজে সক্ষমতা, শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্য এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের অনুভূতি—সব দিকেই তাদের উন্নতি উল্লেখযোগ্য। এটি মাপা হয় হার্ট ফেইলর রোগীদের জন্য বিশেষভাবে ব্যবহৃত একটি মানদণ্ডের মাধ্যমে।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—যারা শর্তসাপেক্ষে খাবার পেয়েছেন, অর্থাৎ ওষুধ নেওয়া ও ফলো-আপে উপস্থিত থাকাকে যার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল, তারা আরও বেশি সন্তুষ্টি ও ভালো জীবনমানের কথা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, তাজা শাকসবজির বাক্স পাওয়া রোগীরা প্রস্তুত খাবার পাওয়া রোগীদের তুলনায় বেশি সন্তুষ্ট ছিলেন। রান্না করার সুযোগ পাওয়া এবং নিজের মতো করে খাবার ব্যবহার করার স্বাধীনতা তাদের কাছে বেশি ইতিবাচক মনে হয়েছে।
যদিও ৯০ দিনের মধ্যে হাসপাতালে পুনরায় ভর্তি হওয়ার ঘটনা তিন দলের মধ্যেই খুব বেশি আলাদা ছিল না—মোট ১৮% রোগী অন্তত একবার ভর্তি বা জরুরি সেবা নিয়েছেন। গবেষকরা জানান, এই অংশটি তুলনামূলক ছোট সময়ের হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদে পার্থক্য স্পষ্ট হতে পারে।
গবেষণার তত্ত্বাবধানে থাকা বিশেষজ্ঞের মতে, এই ফলাফল প্রমাণ করে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের শক্তি রোগীর দীর্ঘমেয়াদি রোগ ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। তিনি বলেন, সঠিক খাবার যদি সহজভাবে রোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, তাহলে চিকিৎসা-পরবর্তী ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে। তার মতে, দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত অনেকের জন্য পুষ্টিকর খাবার ওষুধের মতোই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
স্বাস্থ্যসেবায় খাদ্যকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি এখন আরও গুরুত্ব পাচ্ছে। পুষ্টি নিরাপত্তা না থাকলে দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বাড়ে—এ বিষয়টি বিভিন্ন গবেষণায়ও উঠে এসেছে। তাই স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া হলে রোগীর জীবনযাত্রা বদলে যেতে পারে—এ গবেষণা সেই ধারণাকে আরও জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে।



