আকাশে ছুটে চলা গ্রহাণুকে ধরে ফেলার ধারণা একসময় শুধু কল্পবিজ্ঞানেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রগতিতে এখন সেই কল্পনাই বাস্তবের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। গ্রহাণু—যা কখনো ছোট পাথরের মতো আবার কখনো বিশাল আকারের—মূলত নানা ধরণের ধাতুতে সমৃদ্ধ। পৃথিবীতে ধাতুর খনিজভাণ্ডার কমতে থাকায় বিজ্ঞানীরা মহাকাশের এই গ্রহাণুগুলোকে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য খনিজ উৎস হিসেবে দেখছেন। আর সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন এক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কাজে এগিয়ে চলছে একটি মার্কিন মহাকাশ–প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান।
তাদের গবেষণার মূল কেন্দ্রবিন্দু একটি বিশেষ ধরনের ক্যাপচার ব্যাগ, যা মহাকাশে ভাসমান গ্রহাণুকে নিরাপদে আটকে ফেলতে সক্ষম হবে। ছোটখাটো পাথর থেকে শুরু করে বড় আকারের গ্রহাণু—সবই এই ব্যাগের আওতায় আসতে পারবে বলে জানানো হয়েছে। শুধু গ্রহাণু ধরাই নয়, এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে মহাকাশের আবর্জনা অপসারণের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অনুসন্ধানী ও মহাকাশ প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, গ্রহাণু খনন একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং জটিল প্রক্রিয়া। এই কাজ সফল করতে হলে একাধিক ধাপ পেরোতে হয়—প্রথমত গ্রহাণুকে শনাক্ত করা, তারপর সেটিকে নিরাপদে ধরার প্রযুক্তি নিশ্চিত করা, এরপর ধাতু সংগ্রহের প্রক্রিয়া চালানো। এই পুরো ধাপকে সহজ করতে ক্যাপচার ব্যাগ একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে এই বিশেষ ব্যাগের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, পৃথিবীর মতো স্থিতিশীল কক্ষপথে থাকা গ্রহাণুকে ধরে আনার জন্য এটি যথেষ্ট কার্যকর হতে পারে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর খুব বেশি দূরে নয়—মাত্র কয়েকশ কিলোমিটার দূরত্বে—এমন বেশ কিছু গ্রহাণু রয়েছে যেগুলো থেকে ধাতু আহরণ করা সম্ভব। ইতোমধ্যে শত শত গ্রহাণুর তথ্য সংগ্রহও সম্পন্ন হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৮ সালের মধ্যেই প্রথম একটি গ্রহাণু ধরার চেষ্টা করা হবে।
এই প্রকল্পে কাজ এগিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারী ও সরকারি গবেষণা সংস্থার কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য অর্থায়ন পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গবেষণা–উন্নয়ন চুক্তি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ মিলিয়ে কয়েক কোটি ডলার।
এর আগে তিনটি গ্রহাণুতে খনন করার চেষ্টায় বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে। তাই এবার লক্ষ্য হচ্ছে কম খরচে বেশি কার্যকর পদ্ধতি তৈরি করা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, একটি মহাকাশযানের সঙ্গে লাগানো থাকবে বড় একটি নমনীয় ক্যাপচার ব্যাগ। মহাকাশযান লক্ষ্যবস্তুর কাছাকাছি পৌঁছানোর পর ব্যাগটি ছড়িয়ে গ্রহাণুটিকে নিরাপদে আবদ্ধ করবে। যেহেতু গ্রহাণুর ভেতরে নানা ধরনের উপাদান ও গঠন থাকে, তাই নমনীয় ব্যাগটি সেগুলোকে কোনো ক্ষতি ছাড়াই ধরে রাখতে পারবে।
দীর্ঘমেয়াদে লক্ষ্য হলো—এই ক্যাপচার ব্যাগ ব্যবহার করে গ্রহাণু খননের একটি সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সাশ্রয়ী ব্যবস্থা তৈরি করা। সবচেয়ে বড় ব্যাগের ধারণক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টন ওজনের গ্রহাণু পর্যন্ত। পরিকল্পনা সফল হলে ২০২৮ সালেই প্রথম বাস্তব খননযোগ্য গ্রহাণু ধরার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি এই প্রযুক্তি অকেজো স্যাটেলাইটসহ মহাকাশের বিভিন্ন আবর্জনা সংগ্রহেও ব্যবহার করা যেতে পারে বলে গবেষকেরা জানিয়েছেন।
এই উদ্ভাবনী উদ্যোগ সফল হলে ভবিষ্যতে মহাকাশভিত্তিক খনিজ আহরণ নতুন শিল্পযাত্রার সূচনা করবে, যা পৃথিবীর হ্রাসমান সম্পদের বিকল্প উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।



