লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে আবারও নতুন সামরিক অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রতিরক্ষাপ্রধান ঘোষণা দিয়েছেন যে, ওই অঞ্চলে সক্রিয় মাদক-সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে দমন ও নির্মূল করার জন্য ওয়াশিংটন নতুন করে একটি সামরিক অপারেশন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় এই ঘোষণা আসে, যা লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে নতুনভাবে আলোচনায় এনে দিয়েছে।
গত কয়েক মাসে লাতিন আমেরিকার আঞ্চলিক জলসীমায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতা আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সমুদ্রপথে নজরদারি, সামরিক মহড়া এবং সীমিত পরিসরে কিছু আক্রমণও পরিচালনা করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ থেকে বিশ্লেষকদের ধারণা ছিল—যুক্তরাষ্ট্র স্থলপথেও অপারেশন পরিচালনা করতে পারে। ফলে অঞ্চলে সংঘাতের মাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সেই উদ্বেগের মধ্যেই নতুন অভিযান ঘোষণার বিষয়টি ব্যাপক গুরুত্ব পেয়েছে।
প্রতিরক্ষাপ্রধান তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বার্তায় উল্লেখ করেছেন, নতুন অপারেশনের নাম ‘অপারেশন সাউদার্ন স্পিয়ার’। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, এই অভিযান যুক্তরাষ্ট্রের মাতৃভূমিকে সুরক্ষিত রাখতে ভূমিকা রাখবে এবং সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা মাদক-সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলোকে নির্মূল করবে। পাশাপাশি দেশে প্রাণঘাতী মাদকের সরবরাহ বন্ধ করাও এই অভিযানের উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে অভিযানের সময়কাল, কবে শুরু হবে, বা এর সামগ্রিক কাঠামো সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। প্রতিরক্ষাপ্রধান জানিয়েছেন নতুন অপারেশনটি পূর্বে পরিচালিত তৎপরতার তুলনায় কীভাবে ভিন্ন হবে, সেটিও এখনো প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও পেন্টাগন অভিযানসংক্রান্ত অতিরিক্ত তথ্য দিতে রাজি হয়নি। শুধু প্রতিরক্ষাপ্রধানের আনুষ্ঠানিক বক্তব্যই তারা নিশ্চিত করেছে। তবে কয়েকটি সূত্র জানাচ্ছে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা এই অপারেশনের পরিকল্পনা প্রেসিডেন্টের কাছে জমা দিয়েছেন। সেখানে ভেনেজুয়েলায় স্থলপথে হামলার সম্ভাবনাও পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে আরও কিছু সূত্র জানিয়েছে, এই সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে তিন দফায় বৈঠক করেছেন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। আলোচনার বিষয় ছিল—যদি ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তবে সেটির কৌশল কী হবে এবং কোন কোন বাহিনী এতে অংশ নেবে। বৈঠকগুলোর সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
বর্তমানে লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক সামরিক শক্তি মোতায়েন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ এবং পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন। গত সপ্তাহেই ওই অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে মার্কিন বিমানবাহী রণতরি—যাতে রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার সেনা ও ৭৫টি যুদ্ধবিমান।
মাদকবিরোধী সামরিক অভিযান পরিচালনা করা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের একটি চলমান নীতি। ক্যারিবীয় সাগর থেকে শুরু করে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় মাদক চোরাচালানকারী নৌযান লক্ষ্য করে নিয়মিত সামরিক হামলা চালানো হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় এমন কমপক্ষে ২০টি অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর হামলায় ৭৬ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
এই প্রেক্ষাপটে নতুন সামরিক অপারেশনের ঘোষণা লাতিন আমেরিকার ভূরাজনীতি এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।



