যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে সম্প্রতি আবিষ্কার হয়েছে এক অনন্য আকৃতির ডাইনোসর, যার শরীরের গঠন অনেকটা আধুনিক বিড়ালের মতো। নতুন এই প্রজাতির নাম দেওয়া হয়েছে এনিগমাকার্সর মলিবর্থোইকে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি ছিল জুরাসিক যুগের এক ক্ষুদ্র, দ্রুতগামী এবং সম্পূর্ণ তৃণভোজী ডাইনোসর, যা মূলত মরিসন ফরমেশন এলাকায় বাস করত।
গবেষকদের মতে, প্রাণীটি দৈর্ঘ্যে প্রায় তিন ফুটের মতো ছিল। তার ক্ষিপ্রতা, দৌড়ানোর সক্ষমতা এবং দ্রুত গতিশীল আচরণই ছিল বেঁচে থাকার প্রধান উপায়। বিশাল আকারের শিকারিদের মধ্যে টিকে থাকার জন্য এর প্রধান প্রতিরক্ষা ছিল গতি। প্রায় ১৫ কোটি বছর আগে জুরাসিক সময়কার বন্যাবিধৌত সমভূমিতে এটি দৌড়ঝাঁপ করে জীবনধারণ করত।
এ ধরনের জীবাশ্ম প্রথম পাওয়া যায় ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে, কলোরাডোর একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থেকে। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যের জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞেরা নমুনাটি বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং এর নতুন পরিচয় নির্ধারণ করেন। নতুন আবিষ্কৃত এই ডাইনোসরের গঠন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর কোমর, পা, বাহু ও মেরুদণ্ড আশ্চর্যরকম সম্পূর্ণভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। ফলে এর শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
গবেষকদলের নেতৃত্বে থাকা বিশেষজ্ঞ জানান, এই ডাইনোসরের নামের মধ্যেই তার আচরণগত পরিচয় লুকিয়ে রয়েছে। এনিগমাকার্সর শব্দের অর্থ রহস্যময় ও দ্রুতগামী—যা প্রাণীটির জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্যকে ইঙ্গিত করে। প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়, এর ফিমার, টিবিয়া ও গোড়ালির হাড়ের অনুপাত দেখে বোঝা যায় যে, প্রাণীটি অত্যন্ত দ্রুত ও চটপটে ছিল। খোলা সমতলে দৌড়ে চলার জন্য এটির শরীর সম্পূর্ণ অভিযোজিত।
দীর্ঘদিন ধরে মরিসন ফরমেশন থেকে পাওয়া ছোট আকারের উদ্ভিদভোজী ডাইনোসরগুলো সাধারণভাবে ‘ন্যানোসর’ নামে শ্রেণিবদ্ধ করা হতো। কিন্তু নতুন জীবাশ্ম বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, এই প্রজাতিটি ন্যানোসরের চেয়ে আলাদা এবং এর নিজস্ব স্বতন্ত্র বিবর্তনধারা রয়েছে। গবেষণায় পাওয়া তথ্য মতে, নতুন এই ডাইনোসরের সঙ্গে চীনের ছোট জুরাসিক ডাইনোসর ইয়ানডসর-এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এটি নিওঅরনিথিসচিয়ান নামে পরিচিত প্রাচীন পাখিসদৃশ তৃণভোজী শ্রেণির সঙ্গে একটি বিস্তৃত বিবর্তনগত যোগসূত্রের দিকে ইঙ্গিত দেয়।
মরিসন ফরমেশন অঞ্চলটি প্রায় ১৫ কোটি বছরের পুরোনো, যেখানে শুধু বিশাল অ্যাপাটোসর, স্টেগোসর কিংবা আল্লোসরের মতো ডাইনোসরের জীবাশ্মই নয়, বরং ছোট ও দ্রুতগামী তৃণভোজী প্রাণীরাও সহাবস্থান করত। বিশাল শিকারির ছায়ায় বাস করা ছোট প্রাণীগুলোর জন্য দৈনন্দিন জীবন ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। মানুষের হাঁটু পর্যন্ত উচ্চতার এই ছোট ডাইনোসরগুলো ঘন গাছপালার ভেতর দৌড়ে খাবার সংগ্রহ করত, আর শিকারিদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করত দ্রুতগতি ও সতর্কতার মাধ্যমে।
বর্তমানে জীবাশ্মটি থ্রিডি স্ক্যান প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ডিজিটাল স্ক্যানে এর পেশি-সংযুক্তি, হাড়ের সূক্ষ্ম গঠন, বৃদ্ধির চিহ্নসহ এক মিলিমিটারেরও ছোট বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা যাচ্ছে। গবেষক দলের মতে, ছোট ডাইনোসরের জীবাশ্ম সাধারণত কম পাওয়া যায় এবং এগুলো অধ্যয়ন করা কঠিন। তাই নতুন এই আবিষ্কার ভবিষ্যতের গবেষণার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করেছে।



