Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeএডুকেশনবন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের নতুন ভরসা: আলাস্কার অনন্য ভাষা–শিক্ষা উদ্যোগ

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের নতুন ভরসা: আলাস্কার অনন্য ভাষা–শিক্ষা উদ্যোগ

পশ্চিম আলাস্কার উপকূলীয় গ্রামগুলোতে গত মাসের ভয়াবহ বন্যা বহু মানুষের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির ধারাকে এক মুহূর্তে পাল্টে দিয়েছে। টাইফুনের প্রভাবে সৃষ্ট বন্যায় ছোট ছোট গ্রামগুলোর ঘরবাড়ি পানিতে ভেসে যায়, ভেঙে পড়ে শত শত বাড়িঘর। প্রায় ৭০০টির মতো বাড়ি ধ্বংস বা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকে পানির স্রোতের মধ্যে আটকা পড়েন, পরিবারগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে। একজনের মৃত্যু এবং দু’জনের এখনো নিখোঁজ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এই পরিস্থিতিতে শত শত মানুষকে হেলিকপ্টারযোগে সরিয়ে নিয়ে যেতে হয় আলাস্কার সবচেয়ে বড় শহরে।

নতুন পরিবেশ, বড় শহরের ব্যস্ততা এবং গ্রামের ঐতিহ্যবাহী জীবন থেকে হঠাৎ বিচ্ছিন্ন হওয়া—সব মিলিয়ে স্থানচ্যুত শিশুদের মানসিক চাপ আরও বেড়ে ওঠে। ঠিক এমন সময়ে কিছু শিশু আবারও নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতির স্পর্শ খুঁজে পাচ্ছে একটি বিশেষ স্কুলভিত্তিক ভাষা–নিবিড় শিক্ষাক্রমে, যেখানে তাদের মাতৃভাষা ইউপিক এবং সংস্কৃতি গুরুত্ব পায়। এটি রাজ্যের মাত্র দুইটি এ ধরনের কর্মসূচির একটি।

ইউপিক ভাষাভাষী শিক্ষার্থীদের জন্য এই প্রোগ্রামটি আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক শিশু বলছে, শহরে এসে তারা ইংরেজির প্রভাব বেশি অনুভব করলেও এই ক্লাসে তারা আবার তাদের ভাষায় কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। কেউ কেউ জানায়, নিজেদের মায়ের সঙ্গে বা সহপাঠীদের সঙ্গে ইউপিক ভাষায় কথা বলে তাদের মধ্যে এক ধরনের ঘরের কাছাকাছি থাকার অনুভূতি ফিরে আসে।

আলাস্কার বৃহত্তম স্কুল ডিস্ট্রিক্টে বাড়িতে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা হয়, যার মধ্যে ইউপিক পঞ্চম সর্বাধিক ব্যবহৃত ভাষা। প্রায় এক দশক আগে অভিভাবকদের দীর্ঘদিনের অনুরোধ এবং একটি ফেডারেল অনুদানের মাধ্যমে এ ভাষা–নিবিড় শিক্ষাক্রমটি চালু করা হয়। বর্তমানে এটি প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিস্তৃত।

এ কর্মসূচির তত্ত্বাবধায়ক একজন আলাস্কা নেটিভ প্রশাসক, যিনি নিজেও শৈশবে পরিবারের কাছ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে জীবনধারা শিখে বড় হয়েছেন। তিনি নিজের পরিবারে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষা হারিয়ে যাওয়ার বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন। তার আত্মীয়দের কেউ কেউ বিদ্যালয়ে মাতৃভাষায় কথা বলতে গিয়ে শাস্তিও পেয়েছিলেন। তাই ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় তার ব্যক্তিগত আগ্রহও প্রবল।

বন্যার পর যেসব পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছান, সেখানে তিনি গিয়ে তাদের স্বাগত জানান এবং অনেক অভিভাবককে ভাষা–নিবিড় ক্লাসে সন্তানদের ভর্তি করতে উৎসাহিত করেন। অনেকে তাকে দেখান বন্যায় নষ্ট হয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী খাবারের মজুত—হাঁস, সিল, গুজ, মুস কিংবা শীতের জন্য প্রস্তুত করা অন্য খাদ্য। তিনি জানান, এই সংকটময় সময়ে শিশুদের আরামদায়ক পরিবেশ দেওয়া জরুরি।

এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭০টি শিশু এই স্কুল ডিস্ট্রিক্টে ভর্তি হয়েছে, যার মধ্যে ৭১ জন রয়েছে ইউপিক নিবিড় শিক্ষায়। আগে এটি ছিল সবচেয়ে ছোট ভাষা প্রোগ্রাম, এখন তা দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা দিনের অর্ধেক সময় ইউপিক ভাষা, বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান শিখছে; বাকি সময় ইংরেজিতে গণিত ও ভাষাশিক্ষা চলছে।

গ্রাম থেকে আসা বহু শিশু বলছে, নতুন শহুরে জীবনে মানিয়ে নেওয়া কঠিন হলেও ভাষা–নিবিড় ক্লাস তাদের সেই শূন্যতা কিছুটা পূরণ করছে। কিছু শিশু জানিয়েছে, তারা এমনকি তাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে এখন ইউপিকে আরও সাবলীলভাবে কথা বলতে পারে—যা দুই–তিন প্রজন্মের ভাষাগত দূরত্ব কমিয়ে দিচ্ছে।

স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নিতে নানা সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, আলাস্কা নেটিভদের শিকার–জীবনধারার অনুসরণে বিশেষ খেলাধুলা ও ব্যায়াম আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। তাদের মতে, এই প্রোগ্রাম শুধু ভাষা শেখায় না—বরং দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক ক্ষতও কিছুটা সারিয়ে তোলে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments