যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যক্রম নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার পর। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তির নেতৃত্বাধীন দপ্তরকে ঘিরে যে বিতর্ক চলছিল, তা আবারও সামনে এনেছে—ডাউনিং স্ট্রিটের ভেতরকার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের অসংগতি।
গত বৃহস্পতিবার দেশটির উত্তরাঞ্চলে নতুন একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে গিয়েছিলেন সরকারের প্রধান নির্বাহী। এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রকল্প, যা ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। কিন্তু এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি নীতিগত ঘোষণা নয়, বরং নিজের দপ্তরকে ঘিরে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক বিতর্ক সামলাতেই বেশির ভাগ সময় ব্যয় করতে বাধ্য হন।
স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধানের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে তার দপ্তর থেকে নেতিবাচক তথ্য ছড়ানো হয়েছে—এমন অভিযোগ ওঠার পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে হয় সরকারপ্রধানকে। তিনি দাবি করেন, দপ্তর থেকে কোনোভাবেই এমন ব্রিফিং দেওয়া হয়নি। কিন্তু ঘটনাটি স্পষ্ট করে দিয়েছে, বর্তমান সরকারের শীর্ষ স্তরে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে, যা সরকারের কাজকে বারবার ভিন্নদিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সরকারপ্রধানের জন্য এটি এখন একটি সামগ্রিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। একদিকে তিনি চান, তার সরকার গুরুত্বপূর্ণ কাজ করুক এবং জনমানসে সে চিত্র পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠুক। অন্যদিকে, তার নেতৃত্বাধীন দপ্তরের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও অস্বচ্ছ কার্যপদ্ধতি সেই প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
রাজনৈতিক পরিবেশ পরিবর্তন করা একা তার পক্ষে সম্ভব না হলেও, নিজের অফিস পরিচালনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি আনা সম্ভব ছিল—এমন মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কাকে বসানো হবে, কাকে সরানো হবে, বা কোন পদ কখন বদলানো হবে—এসব বিষয়ে সরকারপ্রধানের অস্থিরতা এবং বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের প্রবণতা ডাউনিং স্ট্রিটকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
একসময় দপ্তরের কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক দায়িত্বে যাকে রাখা হয়েছিল, তাকে নিয়োগ দিতে বেশ দ্বিধায় ছিলেন তিনি। আবার আরেকজনকে প্রধান সহযোগী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পরবর্তীতে বদলে দেওয়া হয়েছে। নীতিনির্ধারণী টিম ও রাজনৈতিক পরামর্শকরা ঘনঘন পরিবর্তিত হচ্ছে, যার ফলে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা এবং তা অনুসরণে ধারাবাহিকতা নেই। এই অস্থিরতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
সমালোচকরা বলছেন, সরকারপ্রধান বিদেশনীতি ও আন্তর্জাতিক সফরে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করেন, অথচ সংসদের সদস্যদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বা জনগণের মতামত শোনা—এসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রায়ই উপেক্ষিত থাকে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগেও তার সীমাবদ্ধতা দেখা যায়, যা রাজনৈতিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে।
তবে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা কাঠামোগত। দেশের শীর্ষ দপ্তর পরিচালনার যে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন, তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। কেন্দ্রীয় দপ্তর এবং মন্ত্রিপরিষদ দপ্তরের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন স্পষ্ট নয়। প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সিভিল সার্ভিস প্রধান—এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ আলাদা করা নিয়ে যে সুপারিশ বহুদিন ধরে দেওয়া হচ্ছে, সেটিও এখনো বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।
সরকারপ্রধানের প্রতি জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ না হওয়ায় হতাশা বাড়ছে। ডাউনিং স্ট্রিটের সমন্বয়হীনতা, যোগাযোগ বিভ্রাট এবং নেতৃত্বের অস্পষ্টতা কেবল সরকারের ভাবমূর্তিই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, কেন্দ্রীয় দপ্তরে শক্তিশালী ও স্পষ্ট কাঠামো গড়ে না তুললে এই সমস্যাগুলো আরও বাড়বে। আর সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সরকারপ্রধান নিজেই—কারণ সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও দপ্তর পরিচালনায় দুর্বলতা তার নেতৃত্বকে অবমূল্যায়িত করছে।



