যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলা শাটডাউন অবশেষে শেষ হলো। প্রেসিডেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিলের উপর স্বাক্ষর করার মাধ্যমে এই দীর্ঘতম অচলাবস্থা সমাপ্তি ঘটালেন। এর আগে, কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি অনুমোদনের জন্য ভোট অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে খাদ্যসহায়তা পুনরায় চালু, সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ এবং বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার পুনরুদ্ধারের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।
রিপাবলিকান–নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে ২২২–২০৯ ভোটে প্রস্তাব পাস হয়। প্রেসিডেন্টের সমর্থন দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সাহায্য করেছে। তবে ডেমোক্র্যাট সদস্যরা তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের মূল উদ্বেগ ছিল, দীর্ঘ অচলাবস্থার পরও ফেডারেল স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকির বিষয়ে কোনো সমাধান হয়নি।
সিনেটে ইতোমধ্যেই পাস হওয়া বিলটি প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের পর আজ বৃহস্পতিবার থেকে সরকারি কর্মচারীরা কাজের মাঠে ফিরতে পারবেন। অচলাবস্থার কারণে এই কর্মচারীদের ৪৩ দিন বাধ্যতামূলক ছুটিতে রাখা হয়েছিল। তবে আইনটি কার্যকর হওয়ার পরও সরকারি সেবা ও কার্যক্রম পুরোদমে কখন স্বাভাবিক হবে, তা এখনো নির্ধারিত নয়।
বিল স্বাক্ষরকালে প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে বলেন, “এ ধরনের পরিস্থিতি আর কখনো ঘটতে দেওয়া যাবে না। এভাবে কোনও দেশ চালানো সম্ভব নয়।” বিল অনুযায়ী, সরকারের অর্থায়ন আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মোট ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণের সাথে আরও প্রায় ১ লাখ ৮০ কোটি ডলার ঋণ যোগ হবে।
কংগ্রেসের একজন সদস্য কৌতুক করে উল্লেখ করেছেন, এই শাটডাউন যেন কোনও টেলিভিশন সিরিজের পর্বের মতো দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা ৪০ দিন পার করলাম, অথচ এখনও পুরো গল্পটা বোঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছিল, এটি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শেষ হবে।”
অচলাবস্থার শেষ হওয়ার ফলে বিশেষ করে ভ্রমণ এবং অর্থনীতিতে আশার আলো দেখা দিয়েছে। বিমান চলাচল ব্যবস্থা আবার স্বাভাবিক হচ্ছে, যা থ্যাংকসগিভিং এবং বড়দিনের ছুটির সময় গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যসহায়তা পুনরায় চালু হওয়ায় লক্ষাধিক পরিবার আর্থিক স্বস্তি পাবে। বড়দিনের কেনাকাটা মৌসুমে এটি ভোক্তা ব্যয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
অচলাবস্থার কারণে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ বন্ধ ছিল। যেমন: কর্মসংস্থান, মূল্যস্ফীতি ও ভোক্তা ব্যয় সম্পর্কিত সরকারি পরিসংখ্যান। এর ফলে বিনিয়োগকারী ও নীতিনির্ধারকেরা দেশের অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা জানত না। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, অক্টোবর মাসের কিছু তথ্য হয়তো আর কখনো প্রকাশ হবে না। অর্থনীতিবিদদের হিসাব অনুযায়ী, ছয় সপ্তাহের শাটডাউন দেশের মোট দেশজ উৎপাদন প্রতি সপ্তাহে প্রায় ০.১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে আশা করা হচ্ছে, আগামী মাসে এই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।
স্বাস্থ্যবিমা বিষয়েও নিশ্চিততা নেই। ডেমোক্র্যাটরা কিছু নির্বাচনে জয়লাভ করার পর আশা করেছিলেন, ফেডারেল স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকি বাড়ানো যাবে। তবে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি। নবনির্বাচিত কিছু ডেমোক্র্যাট সদস্য হাউসে শেষ ভাষণে এই বিলের বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, “কংগ্রেস যেন সরকারের জন্য শুধুই একটি আনুষ্ঠানিক সিলমোহর হয়ে না থাকে, যারা মানুষের স্বাস্থ্যসেবা কমিয়ে দেয় এবং শিশুদের খাবার সংকুচিত করে। দেশের জনগণকে দৃঢ় থাকার আহ্বান জানাই।”
এই বিল স্বাক্ষরের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘতম শাটডাউনের শেষ ঘটেছে, তবে এর প্রভাব, বিশেষ করে অর্থনীতি, ভ্রমণ ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে, পর্যায়ক্রমে অনুভূত হবে।



