Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeঅন্যান্যপাকিস্তানে সেনাপ্রধানের ক্ষমতা বাড়ানো ও সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা কমানোর বিল পাস

পাকিস্তানে সেনাপ্রধানের ক্ষমতা বাড়ানো ও সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা কমানোর বিল পাস

পাকিস্তানের পার্লামেন্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংশোধনী পাস হয়েছে, যার মাধ্যমে সেনাবাহিনীর প্রধানকে আরও ক্ষমতাশালী করা হয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে। দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের গণতন্ত্রের জন্য এক গভীর আঘাত হতে পারে।

বুধবার দেশটির নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিলটি পাস হয়। কেবল চারজন সংসদ সদস্য এর বিরোধিতা করেন। এর আগে, দুই দিন আগেই উচ্চকক্ষেও বিলটি পাস হয়, যেখানে বিরোধী দলগুলো আলোচনা বর্জন করে। এভাবে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে সাংবিধানিক পরিবর্তনটি অনুমোদন পেয়ে যায়, যা সাধারণত কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে আলোচনার পর অনুমোদিত হয়। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর হলেই এটি আইনে পরিণত হবে—যা এখন কেবল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে সেনাপ্রধানকে “চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস” পদে উন্নীত করা হবে। ফলে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীও তাঁর অধীনে আসবে। তাঁর মেয়াদ শেষ হলেও তিনি পদমর্যাদা ও আজীবন আইনি সুরক্ষা ভোগ করবেন।

সরকারপক্ষের বক্তব্যে এই পদক্ষেপকে বলা হয়েছে “প্রাতিষ্ঠানিক ঐক্য ও জাতীয় সংহতির প্রতীক”। প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, “আজ আমরা সংবিধানে যে পরিবর্তন এনেছি, এটি কেবল একজন সেনা কর্মকর্তার জন্য নয়, বরং নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রতিও সম্মান প্রদর্শনের এক প্রতীক। জাতি তার নায়কদের সম্মান জানাতে জানে।”

তবে সমালোচকদের মতে, এই সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের সেনাবাহিনী ও ক্ষমতাসীন জোটের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হলো। এতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নতুন সংশোধনীর অধীনে, সাংবিধানিক মামলাগুলো আর সুপ্রিম কোর্টে যাবে না, বরং নতুন করে গঠিত “ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট”-এ স্থানান্তরিত হবে। এই আদালতের বিচারপতিদের নিয়োগ দেবে সরকার নিজেই। অতীতে সুপ্রিম কোর্ট সরকারবিরোধী সিদ্ধান্ত দিয়ে বেশ কয়েকবার নীতিমালা আটকে দিয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রীদের অপসারণ করেছিল।

বিরোধী দলগুলো এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। ভোটের আগেই তারা সংসদ ত্যাগ করে এবং বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলে। তাদের দাবি, এই সংশোধনী নিয়ে কোনো ধরনের পরামর্শ বা অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়নি। বিরোধী নেতারা অভিযোগ করেছেন, “এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সংসদ সদস্যরা গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দিলেন।”

আইন বিশেষজ্ঞরাও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এক সাংবিধানিক আইনজীবী বলেন, “আমরা এমন এক অবস্থার মুখোমুখি হয়েছি যা গত শত বছরে দেখা যায়নি। আদালতের স্বাধীনতা এখন সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। ভবিষ্যতে যখন এই রাজনীতিবিদরাই ন্যায়বিচারের আশায় আদালতে যাবেন, তখন হয়তো সেই আদালত আর স্বাধীন থাকবে না।”

আরেক বিশ্লেষক বলেন, “এই সংশোধনীর মাধ্যমে কার্যত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা শেষ হলো। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি এখন নতুন আদালতের প্রধান বিচারপতি ও বিচারকদের নিজের ইচ্ছেমতো নিয়োগ দিতে পারবেন।”

পাকিস্তানের ইতিহাসে সেনাবাহিনীর প্রভাব সবসময়ই গভীর ছিল, তবে এই সংশোধনী সেই প্রভাবকে সংবিধানিকভাবে বৈধতা দিয়েছে। সমালোচকদের ভাষায়, “সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আজ পার্লামেন্ট সেটি করে দেখাল যা অতীতের সামরিক শাসকরা কেবল স্বপ্নই দেখতেন।”


RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments