বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটে অসদাচরণের অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটিতে যুক্ত হয়েছেন আরও দুই নতুন সদস্য। এ নিয়োগের ফলে কমিটির সদস্য সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচে। বিষয়টি এক সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে দেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
নারী ক্রিকেটে চলমান এই তদন্তের সূচনা হয় জাতীয় দলের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার জাহানারা আলমের সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে। তিনি এক ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নারী দলের সাবেক নির্বাচক ও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি এবং মানসিক নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ আনেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বোর্ড।
প্রাথমিকভাবে ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তারিক উল হাকিম। তাঁর সঙ্গে কমিটিতে ছিলেন বিসিবির নারী পরিচালক রুবাবা দৌলা এবং সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ শুক্লা।
তবে এই তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণার পর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক বিবৃতিতে দাবি জানায়, যৌন হয়রানির মতো সংবেদনশীল অভিযোগের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে কমিটিতে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ অন্তত দুজন স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞকে যুক্ত করা জরুরি।
টিআইবি-র সেই সুপারিশ বিবেচনায় নিয়েই বোর্ড নতুন করে দুইজন আইনজীবীকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বোর্ডের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নবনিযুক্ত সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং আইন কমিশনের বর্তমান সদস্য অধ্যাপক ড. নাঈমা হক এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান খান।
তাদের যুক্ত করার মাধ্যমে তদন্ত কমিটির কাঠামো আরও শক্তিশালী হলো। বোর্ড জানায়, তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বাধীন ও স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হবে, এবং কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
অভিযোগের প্রেক্ষাপট ও পরবর্তী পদক্ষেপ ঘিরে দেশের নারী ক্রিকেটে এখন ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা, পেশাগত সম্মান ও কর্মপরিবেশ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই তদন্তের ফলাফল ভবিষ্যতে নারী ক্রিকেটে প্রশাসনিক ও নীতিগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযোগের যথাযথ তদন্ত শেষে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তারা আরও আশ্বাস দিয়েছেন যে, নারী ক্রিকেটারদের নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতে আরও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।
বর্তমানে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া নির্ধারণ করছে। ক্রিকেটাঙ্গনের বিভিন্ন মহল এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়েছে।



