দীর্ঘ কয়েক দশকের দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনা পেছনে ফেলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি শান্তিপূর্ণ পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইরান। তবে দেশটির পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না।
সম্প্রতি আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত একটি কৌশলগত আলোচনায় ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে তৃতীয় দেশগুলোর মাধ্যমে তেহরানের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে যে বার্তা বিনিময় করছে, তা পরস্পরবিরোধী এবং বিভ্রান্তিকর। এতে করে আলোচনার গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে—যেমন জ্বালানি উৎপাদন, চিকিৎসা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং তাদের ইউরোপীয় মিত্ররা এর বিপরীতে অভিযোগ করছে যে, তেহরান শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির আড়ালে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে।
ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, গত জুন মাসে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত শুরুর আগেই ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে পাঁচ দফা আলোচনার আয়োজন করা হয়। ওই সময় দুই পক্ষই পরমাণু কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনায় অংশ নেয়। কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায়, যখন জুনের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশ নেয় এবং ইরানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়।
এই ঘটনাকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে বর্ণনা করে ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওই হামলার পর থেকে পারমাণবিক আলোচনা পুরোপুরি স্থগিত হয়ে আছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ইরান এখনো কূটনৈতিক সমাধানে বিশ্বাস করে এবং সংলাপের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চায়, তবে দেশের সার্বভৌম নিরাপত্তা ও স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস হবে না।
ইরান সরকারের মতে, পশ্চিমা দেশগুলো একদিকে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করলেও, অন্যদিকে চাপ ও নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়ে আলোচনার পরিবেশ নষ্ট করছে। এ ধরনের দ্বিমুখী আচরণ সমাধানের পরিবর্তে নতুন সংকট তৈরি করছে বলে ইরানের অভিযোগ।
এদিকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্ভাব্য শান্তিপূর্ণ চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু উভয় পক্ষের পারস্পরিক সন্দেহ, আস্থাহীনতা ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের সংঘাতের কারণে আলোচনার অগ্রগতি এখনো অনিশ্চিত।
ইরান পরিষ্কার করেছে, তারা কূটনৈতিক আলোচনার দরজা খোলা রাখবে, তবে জাতীয় নিরাপত্তা এবং পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের বিষয়ে কোনো চাপ মেনে নেবে না। বিশ্লেষকদের ধারণা, আগামী মাসগুলোতে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে যদি উভয় পক্ষ তাদের অবস্থান থেকে না সরে।
এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মহলের নজর এখন তেহরান ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক পদক্ষেপের দিকে। ইরান কি তার নিরাপত্তা অটুট রেখে নতুন চুক্তির পথে এগোবে—নাকি আবারও সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়বে, সেটিই এখন বিশ্বরাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।



