সরকারি দলের ভেতরে নেতৃত্ব পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে জোরালো আলোচনা চলছে। দলের একাংশের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, বাজেট ঘোষণার পরই প্রধানমন্ত্রীকে নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—যে কোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মুখেও তিনি নিজের নেতৃত্বের অবস্থান ধরে রাখার জন্য লড়বেন।
প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীরা মনে করছেন, এখন দলকে একতাবদ্ধ রাখাই সবচেয়ে বড় কাজ। সমালোচকদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বর্তমানে “বাঙ্কার মোডে” চলে গেছে, যা সরকারের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে।
দলের কিছু জ্যেষ্ঠ সদস্যের অভিযোগ, দলীয় অভ্যন্তরে একদল নেতার মধ্যে নেতৃত্ব পরিবর্তনের জন্য গোপন আলোচনা চলছে। তারা মনে করছেন, এটি দলের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে। বেশ কিছু প্রভাবশালী মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে, যাদের মধ্যে স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র ও জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রীরা অন্যতম। এছাড়া কয়েকজন সিনিয়র ব্যাকবেঞ্চ এমপির কথাও আলোচনা হচ্ছে।
একজন মন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী এই লড়াই ছাড়বেন না। ২০২১ সালের উপনির্বাচনের সময়ও তিনি দলের দায়িত্ব ছাড়ার কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।” তিনি আরও যোগ করেন, “তিনি সেই অল্প কয়েকজনের একজন যিনি দলকে সাধারণ নির্বাচনে বিজয় এনে দিতে পেরেছেন। এখন তাঁকে সরানো একেবারেই অযৌক্তিক।”
দলের মধ্যে ধারণা, আগামী বছরের মে মাসে স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় নির্বাচনের পর বড় ধরনের রাজনৈতিক মোড় আসতে পারে। অনেকেই মনে করছেন, দল ওই নির্বাচনে খারাপ ফলাফল করতে পারে, তবে কেউ কেউ বলছেন, তার আগেই নেতৃত্ব পরিবর্তনের চিন্তা শুরু করা উচিত।
দলের এক প্রবীণ সংসদ সদস্য বলেন, “স্থানীয় নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা সহজ কথা, কিন্তু আমি আমার স্থানীয় কাউন্সিলরদের হারাতে চাই না।” আরেকজন জানান, “বাজেটের পর পরিস্থিতি অনেকটাই বদলাতে পারে। কেউ যদি সাহস করে পদক্ষেপ নেয়, তবে বড় পুরস্কারও পেতে পারে।”
প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মধ্যেও কিছু সন্দেহের ছায়া পড়েছে। সরকারপক্ষের একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এখন তীব্র চাপ কাজ করছে এবং কিছু বিশ্বস্ত মন্ত্রীকে অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।
দলীয় একটি সূত্র জানায়, “একজন নেতাকে সরানোর চিন্তা এখন দলের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। এটা শুধু দলের ভেতর বিভাজন তৈরি করবে, যা সরকারের জন্য আরও বড় সংকট তৈরি করবে।”
দলের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা বলেন, “এ মুহূর্তে কোনো বিকল্প নেতৃত্ব দৃশ্যমান নয়। এখন যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের কেউই স্পষ্ট নীতিগত দিকনির্দেশনা দিতে পারবে না।” তিনি আরও বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নিঃসন্দেহে যোগ্য, কিন্তু তিনিও এখন দায়িত্বে ব্যস্ত। নেতৃত্ব পরিবর্তনের সময় এখন নয়।”
সরকারের ভেতরের অনেকেই মনে করছেন, এখন নেতৃত্ব পরিবর্তন হলে দল তীব্র অস্থিতিশীলতার মুখে পড়বে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হতে পারে, বিশেষ করে সেই বিদেশি অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক, যাদের সঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তুলেছেন।
তবে দলের কিছু সদস্য মনে করছেন, সরকারের জনপ্রিয়তা এখন মারাত্মকভাবে কমে গেছে। এক মন্ত্রী বলেন, “জনগণের মধ্যে এখন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে, যা আগের কোনো নেতার সময়ও দেখা যায়নি।” সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অজনপ্রিয় নেতাদের একজন এবং গত কয়েক মাসে দলের সমর্থন ২০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে।
তবে দলের নিয়ম অনুযায়ী, নেতৃত্ব পরিবর্তন সহজ নয়। নতুন নেতৃত্ব প্রস্তাব করতে হলে অন্তত ২০% সংসদ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন, যা বর্তমান সংসদীয় দলের আকার অনুযায়ী ৮১ জনের সমর্থন লাগবে।
একজন মন্ত্রী বলেন, “অনেকে মনে করছেন বিকল্প খোঁজা মানে নিখুঁত নেতৃত্ব খোঁজা। কিন্তু বাস্তবতা হলো—বিকল্প নয়, এখন দলকে রক্ষা করাই বড় কাজ।”
দলের মধ্যে নতুন করে সংস্কারপন্থী একটি দলের উত্থানও এখন বড় চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাস, এই নতুন দলের নেতা তার জন্য সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারেন। তবে তিনি আত্মবিশ্বাসী যে, শক্ত হাতে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে পারবেন।
অন্যদিকে, দলের কিছু তরুণ এমপি জানিয়ে দিয়েছেন, “আমরা অন্য দলের মতো এক সংসদ মেয়াদে একাধিক নেতা বদলাব না।”



