চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের গার্ড-ব্রেক বগি থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন রেলওয়ের এক স্টেশন মাস্টার। আহত ব্যক্তির নাম ইকবাল হোসেন, যিনি লাকসাম স্টেশনের দায়িত্বে আছেন বলে জানা গেছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ট্রেনটি কালুরঘাট সেতু পার হওয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিনি ব্যক্তিগতভাবে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনে। ঘটনাটি ঘটেছে ট্রেনের গার্ড-ব্রেক বগিতে, যা সাধারণত ট্রেনের সবচেয়ে পেছনের অংশে থাকে এবং সেখানে ট্রেনের গার্ড বা পরিচালক অবস্থান করেন। এ বগিতেই থাকে ট্রেনের খাবার ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম।
কালুরঘাট সেতুটি চট্টগ্রামের অন্যতম পুরনো রেলসেতু, যেখানে ট্রেনের গতি নিরাপত্তার কারণে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটারে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। তারপরও দুর্ঘটনাটি ঘটে যায়।
চট্টগ্রামের জানালি হাট স্টেশনের স্টেশন মাস্টার জানান, কালুরঘাট সেতু দিয়ে যাওয়ার সময় ট্রেনের গতি খুব ধীর ছিল। তবে কোনোভাবে ভারসাম্য হারিয়ে লাকসামের স্টেশন মাস্টার ইকবাল হোসেন সেতুর ওপর থেকে পড়ে যান।
তিনি আরও জানান, ট্রেন থেকে নিচে পড়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাত পান ইকবাল হোসেন। পরে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় তাঁকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার পর পর্যটক এক্সপ্রেসের যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ট্রেনের গার্ড ও ক্রু সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেন থামিয়ে উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেন। তবে দুর্ঘটনার সময় সেতুর নিচে পানি থাকায় বড় ধরনের প্রাণহানি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
দুর্ঘটনার পর রেলওয়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা জানিয়েছেন, কীভাবে ট্রেনের বগি থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রেন চলার সময় ভারসাম্য হারানো বা দরজা খোলা থাকায় এমনটি ঘটতে পারে।
কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস প্রতিদিন সকাল সোয়া ছয়টায় রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে। পথে চট্টগ্রাম স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয় এবং সেখান থেকে আবার কক্সবাজারের উদ্দেশে যাত্রা করে। ট্রেনটি চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু পার হয় ধীর গতিতে, কারণ সেতুটি শতবর্ষী এবং নড়বড়ে কাঠামোর কারণে অতিরিক্ত গতি ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এই দুর্ঘটনার পর পর্যটক এক্সপ্রেস সাময়িকভাবে বিলম্বিত হয়, তবে পরবর্তীতে পুনরায় যাত্রা শুরু করে। আহত স্টেশন মাস্টারের শারীরিক অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
এই ঘটনাটি রেল নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পুরনো অবকাঠামো এবং বগির নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতির কারণে এমন দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কালুরঘাট সেতুতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা তদারকি জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় তদন্তের পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।



