বিশ্বখ্যাত সম্প্রচার মাধ্যম বিবিসি বর্তমানে গভীর সংকটে পড়েছে। সংস্থাটি এখন নেতৃত্বহীন, দিশাহীন ও অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিষ্ঠানের এক সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
সম্প্রতি মহাপরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদত্যাগের পর এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “বিবিসি এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে সুস্পষ্ট নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনার অভাব স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।”
দীর্ঘদিন বিবিসির সংবাদ বিভাগে দায়িত্ব পালন করা এই সাবেক কর্মকর্তা পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। তাঁর মতে, বর্তমানে সংস্থার ভেতরে যে অস্থিতিশীলতা চলছে, তা মোকাবিলায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, “যত দ্রুত এই পরিস্থিতি সামলানো না যায়, তত দ্রুত এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।”
তিনি বিশ্বাস করেন, সংকটময় এই সময়ে বিবিসির চেয়ারম্যানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাঁর মতে, চেয়ারম্যান এখনো সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারছেন না।
সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, “আমরা এখনো জানি না বিবিসির ভেতরে যা ঘটেছে, তার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্থার অবস্থান কী। এত বড় পরিবর্তনের সময়েও কোনো স্পষ্ট বার্তা না পাওয়া সত্যিই উদ্বেগজনক।”
উল্লেখ্য, বিবিসির মহাপরিচালক এবং নিউজ বিভাগের প্রধান সম্প্রতি একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। সংস্থার সংবাদ পরিবেশনে পক্ষপাতের অভিযোগ ওঠার পর রবিবার রাতে তারা তাদের পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
মহাপরিচালক তাঁর বিবৃতিতে জানান, “আমাদের কিছু ভুল হয়েছে, এবং সেই ভুলের দায়ভার শেষ পর্যন্ত আমারই।” অন্যদিকে, নিউজ বিভাগের প্রধান নির্বাহী বলেন, “চূড়ান্তভাবে এই পরিস্থিতির দায়িত্ব আমারই নিতে হয়েছে। সিদ্ধান্তটি সহজ ছিল না, কিন্তু প্রয়োজনীয় ছিল।”
এদিকে, সংস্থার পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রথম তোলেন প্রতিষ্ঠানটির এডিটোরিয়াল গাইডলাইন ও স্ট্যান্ডার্ডস কমিটির সাবেক উপদেষ্টা। তাঁর অভিযোগ—একটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ঘটনার সংবাদ সম্প্রচারে সম্পাদনা নীতিমালা ভঙ্গ হয়েছে।
বিতর্কের সূত্রপাত হয় বিবিসির জনপ্রিয় একটি অনুসন্ধানী অনুষ্ঠানে প্রচারিত এক তথ্যচিত্র ঘিরে। সেখানে মার্কিন রাজনীতিবিদের একটি বক্তব্য সম্পাদনা করে উপস্থাপন করা হয়, যা দর্শকদের কাছে বিভ্রান্তিকর বলে মনে হয়েছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, ওই তথ্যচিত্রে দুটি ভিন্ন সময়ের বক্তব্য জুড়ে দেওয়া হয়, যাতে মনে হয় রাজনীতিবিদটি এক নির্দিষ্ট ঘটনার উসকানি দিচ্ছেন। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে সংস্থার নীতিনির্ধারক মহল চাপে পড়ে। এই বিতর্ক চলাকালেই সংস্থার দুই শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, বিবিসির জন্য এটি একটি বড় ধরনের আস্থার সংকট তৈরি করেছে। সংবাদ পরিবেশনে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতার যে ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠানটি বহু বছর ধরে ধরে রেখেছে, তা এখন প্রশ্নের মুখে।
সাবেক কর্মকর্তার মতে, “যদি দ্রুত স্বচ্ছ তদন্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে বিবিসির প্রতি জনগণের বিশ্বাস আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।”
একসময় বিশ্বজুড়ে নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম হিসেবে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠান এখন এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে নেতৃত্ব, নীতি এবং আস্থার পুনর্গঠনই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।



