যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় অবশেষে ফেডারেল সরকারের সঙ্গে একটি আর্থিক চুক্তিতে পৌঁছেছে, যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি হারানো গবেষণা তহবিল পুনরুদ্ধার করতে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রশাসনের সঙ্গে চলমান বিতর্কের পর এই সমঝোতাকে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট এক বিবৃতিতে জানান, আগামী তিন বছরে কর্নেল সরাসরি ফেডারেল সরকারকে ৩০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করবে। পাশাপাশি তারা আরও ৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এমন গবেষণায়, যা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি খাতকে শক্তিশালী করবে এবং দেশের কৃষকদের কল্যাণে অবদান রাখবে।
এ বছরের এপ্রিল মাসে ফেডারেল প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা তহবিল থেকে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার আটকে দেয়। অভিযোগ ছিল, প্রতিষ্ঠানটি নাগরিক অধিকার আইন লঙ্ঘন করেছে। যদিও কর্নেল কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ধরনের ভুল স্বীকার করছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকারের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের গবেষণা সহযোগিতা দেশের স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই এই সমঝোতা কেবল তহবিল ফেরত আনা নয়, বরং শিক্ষা ও গবেষণায় স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা এবং একাডেমিক স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতিও পুনরায় নিশ্চিত করেছে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রশাসনের কাছে বিস্তারিত ভর্তি তথ্য সরবরাহ করতে হবে। এসব তথ্যের মধ্যে থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি অনুষদ ও স্কুল অনুযায়ী ভর্তিচ্ছুদের জাতিগত পরিচয়, গড় ফলাফল (GPA), এবং স্ট্যান্ডার্ড টেস্টের ফলাফল। এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানটি তাদের কর্মীদের ফেডারেল ন্যায়বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেবে, যেখানে বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক (DEI) নীতিগুলো পুনর্বিবেচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
চুক্তির মেয়াদ ২০২৮ সালের শেষ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টকে প্রতি তিন মাস পরপর অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই চুক্তিকে একটি “বড় অর্জন” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সমঝোতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় যোগ্যতা ও জবাবদিহিতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে, শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষ থেকেও এই চুক্তিকে “রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ” হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষায় বিভাজনমূলক নীতি দূর করে উৎকর্ষ পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।
কর্নেলই প্রথম নয়—সম্প্রতি আরও দুটি আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয় ফেডারেল সরকারের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তিতে পৌঁছেছে। জুলাই মাসে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের মাধ্যমে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের গবেষণা তহবিল পুনরুদ্ধার করে। একই মাসে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় ১০ বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে স্থানীয় কর্মসংস্থান উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
তিনটি প্রতিষ্ঠানই আদালতে না গিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ হলো—ফেডারেল সরকারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা এবং গবেষণার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।
ফেডারেল প্রশাসন পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তহবিল প্রত্যাহার করে, কারণ হিসেবে দেখানো হয়—তারা ইসরায়েল–গাজা সংঘাত ঘিরে ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনগুলোর প্রতি যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। একই সঙ্গে, বৈচিত্র্য ও লিবারেল নীতির বিরুদ্ধেও প্রশাসনের কড়া অবস্থান ছিল।
সবশেষে, এই চুক্তির মাধ্যমে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় আবারও তাদের গবেষণা ও একাডেমিক কর্মযজ্ঞে ফিরতে পারবে—তবে নতুন শর্ত ও জবাবদিহিতার কাঠামোর মধ্যে থেকে।



