Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকরাশিয়া থেকে ইরানে প্রথম পণ্যবাহী ট্রেন: বাণিজ্যিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

রাশিয়া থেকে ইরানে প্রথম পণ্যবাহী ট্রেন: বাণিজ্যিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

রাশিয়া থেকে যাত্রা করা একটি পণ্যবাহী ট্রেন শনিবার ইরানের আপরিন ড্রাই বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এটাই প্রথমবারের মতো রাশিয়ার কোনো ট্রেন সরাসরি ইরানের এই বন্দরে প্রবেশ করল। এই ঘটনাকে দুই দেশের বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ট্রেন যাত্রা শুধু পণ্য পরিবহন নয়—বরং এটি দুই দেশের পারস্পরিক আস্থার প্রতীক। একই সঙ্গে এটি রাশিয়া, ইরান এবং মধ্য এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে একটি স্থায়ী রেল যোগাযোগ স্থাপনের দিকেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

পণ্যবাহী ট্রেনটিতে ছিল মোট ৬২টি কনটেইনার, প্রতিটি ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের। এসব কনটেইনারে বহন করা হয়েছে কাগজ, পাল্প এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শিল্পজাত পণ্য। ট্রেনটি রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত একটি অঞ্চল থেকে যাত্রা শুরু করে। এর গন্তব্য ছিল ইরান ও ইরাকের বাজার, যেখানে এসব পণ্য পৌঁছানোর পর বিতরণ করা হবে।

যাত্রাপথে ট্রেনটি রাশিয়ার সীমান্ত অতিক্রম করে প্রথমে কাজাখস্তানে প্রবেশ করে, এরপর তুর্কমেনিস্তান হয়ে অবশেষে ইরানের মাটিতে পৌঁছায়। মোট ১২ দিনের দীর্ঘ যাত্রা শেষে ট্রেনটি ইরানের আপরিন ড্রাই বন্দরে এসে থামে। এই যাত্রাপথ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য একটি বিকল্প করিডোর হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথেও যোগাযোগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

ইরান রেলওয়ের বাণিজ্য ও পরিচালনা বিষয়ক উপপরিচালক মরতেজা জাফারি এ বিষয়ে জানান, “চলতি বছরের জুন মাসে চীন থেকে প্রথম একটি পণ্যবাহী ট্রেন আপরিন বন্দরে এসে পৌঁছেছিল। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এখানে ৩০টিরও বেশি ট্রেন এসেছে।” তিনি আরও বলেন, “রাশিয়া থেকে আসা এই ট্রেনটি ইরানের জন্য নতুন এক বাণিজ্যিক সম্ভাবনার সূচনা। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে এই রুটে নিয়মিত পণ্য পরিবহন শুরু হবে।”

এই ঘটনাকে অনেকেই মধ্য এশিয়া অঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। কারণ, রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে এই সরাসরি রেল সংযোগ শুধু দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নয়, বরং আঞ্চলিক অর্থনীতিকেও নতুন প্রাণ দেবে। এছাড়া এই উদ্যোগটি চীন, রাশিয়া এবং ইরানকে সংযুক্ত করে বৃহত্তর ইউরেশীয় করিডোর তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার চাপের মধ্যেও রাশিয়া ও ইরান পরস্পরের সহযোগিতার মাধ্যমে বিকল্প বাণিজ্যপথ তৈরি করছে। এই রেলপথ ব্যবহার করে দুই দেশ শুধু তাদের নিজস্ব বাণিজ্য নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে পণ্য বিনিময়ের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবে।

রাশিয়া থেকে ইরানে পৌঁছানো এই ট্রেনটি তাই শুধু এক পণ্য পরিবহন নয়—এটি একটি বার্তা, যে আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং বিকল্প অর্থনৈতিক পথ এখন বাস্তবায়নের পথে। দুই দেশের জন্য এটি ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় অধ্যায়ের সূচনা, যেখানে বাণিজ্য, যোগাযোগ ও কৌশলগত সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments