Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবিজনেসযুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় দিনে বাতিল আরও ১৪০০ ফ্লাইট

যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় দিনে বাতিল আরও ১৪০০ ফ্লাইট

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিমান চলাচলে অচলাবস্থা ক্রমেই গভীর হচ্ছে। শনিবার পর্যন্ত দেশটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ১,৪০০-র বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এর আগের দিন শুক্রবারের তুলনায় কিছুটা কম হলেও, প্রায় ৬,০০০ ফ্লাইট বিলম্বিত হয়।

এ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে দেশটির ফেডারেল সরকারের চলমান শাটডাউনের কারণে, যেখানে বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রকদের (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার) বেতন বন্ধ থাকলেও তারা বাধ্যতামূলকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ ও ক্লান্তি দেখা দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (FAA) সপ্তাহের শুরুতে ঘোষণা দেয়— দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত ৪০টি বিমানবন্দরে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ফ্লাইট কমানো হবে।

সরকারি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কংগ্রেসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে সমঝোতার অভাবই এ সংকটের মূল কারণ। ১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া শাটডাউন শনিবারে ৩৯তম দিনে পৌঁছায়, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ শাটডাউন হিসেবে রেকর্ড করেছে।

সরকারি অচলাবস্থার প্রভাবে এখন শুধু সরকারি কর্মচারীরাই নয়, সাধারণ মানুষও ভোগান্তিতে পড়ছেন। খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি বন্ধের পাশাপাশি বিমানবন্দরে যাত্রীদের ভিড় ও অপেক্ষার সময়ও বেড়ে গেছে। সপ্তাহান্তে সিনেট সদস্যরা ওয়াশিংটনে থেকে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন, যাতে এই অচলাবস্থা দ্রুত সমাধান করা যায়।

শনিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে একটি প্রধান মার্কিন এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষ দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আহ্বান জানিয়েছে— অবিলম্বে সমঝোতায় পৌঁছে শাটডাউন শেষ করতে।

এদিন সবচেয়ে বেশি ভিড় ও বিলম্ব দেখা গেছে নিউ জার্সির নিউয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। দুপুর নাগাদ এই বিমানবন্দরে আগত ফ্লাইটগুলোর গড় বিলম্ব ছিল চার ঘণ্টারও বেশি, আর প্রস্থানকারী ফ্লাইটগুলো গড়ে দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ছিল।

শনিবার সর্বাধিক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে তিনটি বিমানবন্দরে— চার্লট ডগলাস ইন্টারন্যাশনাল, নিউয়ার্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল, এবং শিকাগোর ও’হেয়ার ইন্টারন্যাশনাল।

তাছাড়া, জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আটলান্টার হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন এবং লা গার্ডিয়া বিমানবন্দরে গড়ে তিন ঘণ্টা, আড়াই ঘণ্টা এবং এক ঘণ্টা পর্যন্ত দেরি হয়েছে, বলে জানিয়েছে FAA।

থ্যাংকসগিভিং ছুটি সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ মৌসুম শুরু হয়েছে। এমন সময়ে ফ্লাইট বাতিল ও দেরি সাধারণ যাত্রীদের জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুধু বাণিজ্যিক ফ্লাইট নয়, ব্যক্তিগত জেট বা প্রাইভেট ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও FAA কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উচ্চ ভিড়যুক্ত বিমানবন্দরগুলোর পরিবর্তে এসব ফ্লাইটকে ছোট বিমানবন্দর বা এয়ারফিল্ড ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনায় নিয়োজিত নিয়ন্ত্রকরা সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারেন।

FAA জানিয়েছে, ফ্লাইট কমানোর হার ধীরে ধীরে বাড়ানো হবে— ৮ নভেম্বর ৪% থেকে শুরু করে ১১ নভেম্বর ৬%, ১৩ নভেম্বর ৮%, এবং ১৪ নভেম্বরের মধ্যে পূর্ণ ১০% পর্যন্ত কমানো হবে।

এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের অধিকাংশই “অপরিহার্য কর্মী” হিসেবে বেতন ছাড়া কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, অনেক নিয়ন্ত্রকই ক্লান্তি ও আর্থিক সংকটের কারণে অসুস্থতার অজুহাতে কাজ থেকে বিরত থাকছেন বা দ্বিতীয় চাকরি নিচ্ছেন।

বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে কেউ কেউ বেতন ছাড়া কাজ করছেন, আবার অনেকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে আছেন। এর মধ্যে পরিবহন নিরাপত্তা সংস্থা (TSA)-এর প্রায় ৬৪,০০০ কর্মীও বেতন পাচ্ছেন না।

২০১৮ সালের শাটডাউনের সময় দেখা গিয়েছিল, এমন অবস্থায় ১০% পর্যন্ত TSA কর্মী ডিউটিতে না এসে বাড়িতে থাকতেন। এবার পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিশেষ করে ভ্রমণ মৌসুমের ব্যস্ততম সময়টিতে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments