রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও হাঙ্গেরিকে এক বছরের জন্য সেই নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার বরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
সম্প্রতি হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মধ্যে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের সময় এই সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট বলেন, হাঙ্গেরির জন্য বিকল্প উৎস থেকে তেল ও গ্যাস সংগ্রহ করা “অত্যন্ত কঠিন”, তাই বিশেষ ছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় ছিল।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার দুটি বৃহত্তম তেল কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল এবং যেসব দেশ বা প্রতিষ্ঠান তাদের কাছ থেকে জ্বালানি কিনবে, তাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটে হাঙ্গেরিকে দেওয়া এই ছাড়টি ইউরোপীয় রাজনীতিতে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে।
হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, যুক্তরাষ্ট্র হাঙ্গেরিকে “তেল ও গ্যাস নিষেধাজ্ঞা থেকে সম্পূর্ণ ও সীমাহীন ছাড়” দিয়েছে। তবে পরে এক মার্কিন কর্মকর্তা পরিষ্কার করেন, ছাড়টি আসলে এক বছরের জন্য সীমিত।
এই সিদ্ধান্তকে হাঙ্গেরির জন্য একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ হাঙ্গেরির সরকার পূর্বে জানিয়েছিল, রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তাদের দেশের অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বৈঠকের প্রকাশ্য অংশে প্রেসিডেন্ট হাঙ্গেরির অবস্থানের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, হাঙ্গেরি একটি স্থলবেষ্টিত দেশ, যার জন্য সমুদ্রপথে জ্বালানি আমদানি করা সম্ভব নয়। যদিও তখন কোনো সুনির্দিষ্ট ছাড়ের ঘোষণা দেননি, পরে নিশ্চিত হয় যে এক বছরের জন্য হাঙ্গেরিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এই পদক্ষেপ প্রেসিডেন্টের পূর্ববর্তী অবস্থানের সঙ্গে কিছুটা বৈপরীত্য তৈরি করেছে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, রাশিয়ার জ্বালানি কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চুক্তির অংশ হিসেবে হাঙ্গেরি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়েক শ’ মিলিয়ন ডলারের প্রাকৃতিক গ্যাস কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও এই সিদ্ধান্ত ইউরোপের অনেক দেশের কাছে নেতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরে হাঙ্গেরির রাশিয়া-ঘনিষ্ঠ নীতির বিরোধিতা করে আসছে।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী হিসেবে পরিচিত। অভিবাসন ও সামাজিক নীতিতে দুই নেতার মধ্যে মিল থাকায়, এই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এই ছাড় হাঙ্গেরির নেতার জন্য রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট বলেন, হাঙ্গেরি একটি স্থলবেষ্টিত দেশ হওয়ায় তাদের লজিস্টিক্যাল সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে তিনি ইউরোপের অন্য দেশগুলোর সমালোচনা করেন, যারা সাগরপথ থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার কাছ থেকে পণ্য কিনছে।
হাঙ্গেরির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাইপলাইনগুলো রাজনৈতিক নয়, বরং বাস্তবিক অবকাঠামোর অংশ, যা দেশের প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহৃত হয়। রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতাকে তারা অর্থনৈতিক বাস্তবতা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে, বিশেষ করে আগামী নির্বাচনে জনগণকে সাশ্রয়ী জ্বালানির প্রতিশ্রুতি দিতে গিয়ে।
দুই দেশের বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও আলোচনা হয়। এটি ছিল প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় ফেরার পর দুই নেতার প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। প্রেসিডেন্ট বলেন, হাঙ্গেরির নেতা রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে ভালোভাবে চেনেন এবং তিনি মনে করেন, “এই যুদ্ধ খুব শিগগিরই শেষ হতে পারে।”
হাঙ্গেরির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বর্তমানে শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও হাঙ্গেরিই ইউক্রেনের শান্তি চায়, অন্য দেশগুলো এখনো যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। হাঙ্গেরির মতে, “অনেক দেশ মনে করে ইউক্রেন যুদ্ধ জিততে পারবে, যা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।”
এ সময় প্রেসিডেন্ট জানতে চান, “তাহলে আপনি মনে করেন ইউক্রেন এই যুদ্ধে জিততে পারবে না?” জবাবে হাঙ্গেরির নেতা বলেন, “অবশ্যই অলৌকিক কিছু ঘটতে পারে।”
জ্বালানি ছাড়ের পাশাপাশি হাঙ্গেরির গাড়ি রপ্তানি শিল্পও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে অভিবাসন ও নীতিগত বিষয়গুলোতে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বিরোধ থাকা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট ইউরোপকে আহ্বান জানিয়েছেন হাঙ্গেরির এই নেতাকে “সম্মান করতে”, কারণ তিনি অভিবাসন বিষয়ে “সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”



