Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeএডুকেশন৬০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় করনেল

৬০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় করনেল

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি দেশটির প্রশাসনের সঙ্গে একটি বড় অঙ্কের চুক্তিতে পৌঁছেছে, যার মাধ্যমে পুনরায় চালু হচ্ছে স্থগিত হয়ে থাকা শত শত মিলিয়ন ডলারের গবেষণা তহবিল।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা আগামী তিন বছরে ৩০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে, যা চলমান মামলার নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে। একইসঙ্গে, আরও ৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে মার্কিন কৃষি খাতের উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রমে, যা দেশের কৃষকদের জন্যও উপকারী হবে।

এ বছরের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলারের গবেষণা অনুদান স্থগিত করে। অভিযোগ ছিল, প্রতিষ্ঠানটি নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত কিছু নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। এই স্থগিতাদেশের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে প্রশাসনের সম্পর্ক টানাপড়েনে ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে চলা সরকারি গবেষণা সহযোগিতা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাগত মিশন ও জাতীয় কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। নতুন এই চুক্তি সেই সহযোগিতার সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করবে এবং একইসঙ্গে শিক্ষাগত স্বাধীনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বাতন্ত্র্যের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করবে।

ছয় পৃষ্ঠার এই সমঝোতা চুক্তিতে উল্লেখ আছে, এটি কোনো দোষ স্বীকারের প্রতিফলন নয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবরই নাগরিক অধিকার আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রশাসনের কাছে তাদের ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য হস্তান্তর করবে, যেখানে অন্তর্ভুক্ত থাকবে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন কলেজ ও স্কুলভিত্তিক শিক্ষার্থীর জাতিগত পরিচয়, ফলাফল এবং মানসম্মত পরীক্ষার পারফরম্যান্সের তথ্য। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কর্মীদের জন্য প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করবে, যা বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম (DEI) থেকে দূরে থাকার নীতিকে অনুসরণ করবে।

চুক্তির অঙ্গ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানকে প্রতি তিন মাসে একবার করে সার্টিফাই করতে হবে যে সব শর্ত পূরণ করা হচ্ছে। এই চুক্তির মেয়াদ নির্ধারিত হয়েছে ২০২৮ সালের শেষ পর্যন্ত।

যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের এক কর্মকর্তা একে প্রশাসনের জন্য একটি বড় অর্জন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার মতে, এই সমঝোতা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেধা, জবাবদিহিতা এবং মানোন্নয়নের প্রক্রিয়া আরও দৃঢ় করবে। শিক্ষা দপ্তরের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, এটি উচ্চশিক্ষায় বিভেদমূলক নীতির অবসান ঘটানোর একটি “রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ।”

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একাধিক আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের সঙ্গে অনুরূপ সমঝোতায় পৌঁছেছে। গত জুলাই মাসে আরেকটি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় ২০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয় সরকারের কাছে, যার বিনিময়ে পুনরায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের গবেষণা অনুদান ফিরিয়ে আনা হয়। এর কয়েক দিন পরই আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় ৫০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান প্রতিশ্রুতি দেয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের এক অঙ্গরাজ্যের কর্মসংস্থান উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহৃত হবে।

এই তিনটি প্রতিষ্ঠানই প্রশাসনের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে না গিয়ে সমঝোতার পথ বেছে নেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন সাম্প্রতিক সময়ে কিছু শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুদান স্থগিত করেছিল, অভিযোগ ছিল—ক্যাম্পাসে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে ইহুদি বিদ্বেষ রোধে তারা যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি।

এছাড়া প্রশাসনের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমের নামে রাজনৈতিক পক্ষপাত ও অসঙ্গতি তৈরি হচ্ছে। ফলে সরকার এই নীতিগুলো পুনর্বিবেচনা করতে চাপ দিচ্ছে।

একই সময়, আরও একটি নামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশে তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া ও কর্মী নীতিতে পরিবর্তন আনে। আর জুলাই মাসে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চাপের মুখে নারীদের খেলাধুলার দলে ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে।

এই ধারাবাহিক সিদ্ধান্তগুলো যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ও গবেষণা ব্যবস্থায় নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যেখানে প্রশাসন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক পুনরায় সংজ্ঞায়িত হচ্ছে।


RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments