শিকাগোর এক ফেডারেল আদালত ফেডারেল এজেন্টদের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগে একটি গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছে, অভিবাসন অভিযান পরিচালনার সময় এজেন্টরা যেন অযৌক্তিকভাবে শক্তি ব্যবহার না করেন।
এই মামলাটি শুরু হয় একটি যৌথ অভিযোগের ভিত্তিতে, যেখানে প্রতিবাদকারী ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা দাবি করেন যে, অভিবাসনবিরোধী অভিযানে যুক্ত থাকা ফেডারেল বাহিনী অতি মাত্রায় বলপ্রয়োগ করেছে। অভিযোগে বলা হয়, এই অভিযানে ইতোমধ্যেই তিন হাজারেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে, এবং শহরের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।
আদালতের বিচারক রায় ঘোষণা করে বলেন, “বর্তমানে ফেডারেল এজেন্টরা যে পরিমাণ শক্তি প্রয়োগ করছে, তার যৌক্তিকতা আমি দেখি না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এজেন্টদের পক্ষ থেকে প্রদত্ত তথ্য ও যুক্তি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
রায়ের আওতায় ফেডারেল কর্মকর্তাদের বিশেষ ধরনের ‘রায়ট কন্ট্রোল’ অস্ত্র, যেমন টিয়ার গ্যাস ও পেপার বল, ব্যবহার সীমিত করা হয়েছে। কেবল তখনই এসব অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে, যখন কোনো পরিস্থিতি “তাৎক্ষণিক হুমকি” তৈরি করে। একই সঙ্গে শারীরিক বলপ্রয়োগ— যেমন সাংবাদিক বা প্রতিবাদকারীদের মাটিতে ফেলে দেওয়া— সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া, কোনো ধরনের গ্যাস বা নিয়ন্ত্রণ অস্ত্র ব্যবহারের আগে কমপক্ষে দুটি সতর্কবার্তা দিতে হবে বলে নির্দেশে বলা হয়েছে।
বিচারক মনে করেন, এই আদেশ প্রথম সংশোধনীর অধিকার— অর্থাৎ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা— সুরক্ষিত রাখবে।
অন্যদিকে, নিরাপত্তা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছেন, এই রায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য “অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করবে” এবং একে তিনি “একজন পক্ষপাতদুষ্ট বিচারকের অতি মাত্রায় হস্তক্ষেপ” বলে মন্তব্য করেন।
এই অভিবাসনবিরোধী অভিযানটি দেশব্যাপী বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। শিকাগোসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের শহরে ফেডারেল হস্তক্ষেপের ফলে একাধিক আদালত মামলা, প্রশাসনিক পরিবর্তন, এমনকি ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন ঠেকানোর ঘটনাও ঘটেছে।
এর আগে একই আদালত অস্থায়ীভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, ফেডারেল এজেন্টদের পরিচয়পত্রসহ কাজ করতে হবে এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে অংশ নেওয়া নাগরিকদের ওপর টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করা যাবে না। তবে এ নির্দেশ অমান্যের অভিযোগ ওঠার পর নতুন রায়ে আরও কঠোর শর্ত যুক্ত করা হয়— এবার থেকে এজেন্টদের শরীরে বাধ্যতামূলকভাবে বডি ক্যামেরা রাখতে হবে।
আদালতে উপস্থাপিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অভিযানের নেতৃত্বে থাকা এক কর্মকর্তা জনসমাবেশের দিকে গ্যাস ছুড়ে দেন, যদিও তিনি দাবি করেছিলেন যে, এক পর্যায়ে তাকে পাথর মারা হয়। কিন্তু ভিডিও প্রমাণে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। বিচারক জানান, ওই কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে তিনি ঘটনার বিষয়ে মিথ্যা বলেছেন।
রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই কর্মকর্তা পূর্বে বলপ্রয়োগ না করার দাবি করলেও ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গেছে, তিনি একজন ব্যক্তিকে জোর করে মাটিতে ফেলে দিচ্ছেন।
এই অভিযানে যুক্ত প্রায় ২৩০ জন এজেন্ট বর্তমানে শিকাগো এলাকায় কাজ করছে। আদালত তাদের কার্যক্রমের ওপর নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার অনুষ্ঠিত শুনানিতে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য দেন যে, তারা টিয়ার গ্যাসের আঘাতে শ্বাসকষ্টে ভুগেছেন, কেউ কেউ পেপার বলের আঘাতে আহত হয়েছেন, আবার কেউ ভিডিও ধারণের সময় বন্দুক তাক করা অবস্থায় ভয় পেয়েছেন।
বিচারক প্রত্যেক সাক্ষীকে জিজ্ঞাসা করেন, এসব ঘটনার পর তারা আর প্রতিবাদে অংশ নিতে পারেন কি না। অনেকেই জানান, এখন তারা ভয় পান এবং মনে করেন, রাস্তায় নেমে কথা বলা আর নিরাপদ নয়।
একজন যুব সংগঠক আবেগপ্রবণভাবে বলেন, “আমি খুবই নার্ভাস হয়ে যাই। মনে হয় আমি নিরাপদ নই, এমনকি প্রতিবাদেও যেতে ভয় লাগে।”
আদালতের এই নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল বাহিনীর কার্যক্রম ও নাগরিক অধিকারের ভারসাম্য নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।



