Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeসম্পাদকীয়নিউইয়র্কে মামদানির ঐতিহাসিক জয়: ডেমোক্র্যাটদের নতুন আশার আলো

নিউইয়র্কে মামদানির ঐতিহাসিক জয়: ডেমোক্র্যাটদের নতুন আশার আলো

মার্কিন রাজনীতির সাম্প্রতিক অচলাবস্থার মধ্যে ডেমোক্র্যাট শিবিরে এক নতুন আশার সঞ্চার করেছে নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে মামদানির ঐতিহাসিক জয়। দীর্ঘদিন ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর হতাশায় নিমজ্জিত ডেমোক্র্যাটরা যেখানে দিক হারিয়ে ফেলেছিল, সেখানে মামদানির এই সাফল্য দলটির পুনরুজ্জীবনের এক প্রতীক হয়ে উঠেছে।

গত অক্টোবর মাসে তিনি একজন স্বঘোষিত সমাজতন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। শুরুতে তার পরিচিতি ছিল একেবারেই সীমিত। কিন্তু প্রচণ্ড পরিশ্রম, সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার এবং “সাশ্রয়ী জীবনযাত্রা”–কে মূল প্রতিশ্রুতি করে গড়ে তোলা প্রচারণার ফলেই তিনি ভোটের অর্ধেকেরও বেশি পেয়েছেন। এটাই ছিল গত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে নিউইয়র্কের সবচেয়ে বেশি ভোটার অংশগ্রহণের নির্বাচন।

বিলিয়ন ডলারের সমর্থনপুষ্ট প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোর মতো প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে মামদানির বিজয়কে অনেকেই ‘অবিশ্বাস্য’ হিসেবে দেখছেন। তার এই অর্জনের মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী মেয়র এবং একইসঙ্গে প্রথম মুসলিম হিসেবে এই পদে অধিষ্ঠিত হলেন।

নিউইয়র্ক বরাবরই ডেমোক্র্যাটদের শক্ত ঘাঁটি হলেও মামদানির এই জয় কেবল স্থানীয় নয়, বরং জাতীয় রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বহন করে। বিশেষ করে এমন এক সময়ে, যখন ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ ‘মাগা’ আন্দোলন কর্মজীবী ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে, মামদানি দেখিয়েছেন—মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাকে সামনে এনে ইতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে ডেমোক্র্যাটরা আবারও জনগণের আস্থা ফিরে পেতে পারে।

সংস্কৃতি ও আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক বিভাজন এড়িয়ে মামদানি তার প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছিলেন সাশ্রয়ী জীবনের প্রতিশ্রুতি। তার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ছিল বিনামূল্যে শিশু যত্নসেবা, ফ্রি বাস সার্ভিস এবং বাড়িভাড়ার ওপর স্থিতিশীলতা বা ভাড়া স্থগিতকরণ। এই সব পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের জীবনে বাস্তব পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেয়, যা একসময় ‘অতি-বামপন্থী’ হিসেবে সমালোচিত হলেও শেষ পর্যন্ত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মধ্যে গভীর সাড়া ফেলে।

মামদানির প্রচারণা শুধু তার নীতির জন্য নয়, বরং তার সংগঠন দক্ষতার জন্যও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। প্রায় এক লক্ষ স্বেচ্ছাসেবক তার হয়ে কাজ করেছেন, যারা লক্ষাধিক দরজায় কড়া নাড়ে। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপরীতে জনগণের এমন উৎসাহী অংশগ্রহণই শেষ পর্যন্ত তার বিজয় নিশ্চিত করে।

এদিকে একই দিনে নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়াতেও ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা চমকপ্রদভাবে জয় পেয়েছেন। তাদের প্রচারণাতেও প্রধান বিষয় ছিল জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট মোকাবিলা, বিদ্যুৎ বিল স্থিতিশীল রাখা এবং আবাসন খরচ কমানো। ক্যালিফোর্নিয়াতেও দেখা গেছে এক ধরনের ইতিবাচক রাজনৈতিক পরিবেশ, যেখানে ভোটাররা আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিয়েছেন।

যদিও এখনই বলা যাবে না যে, ডেমোক্র্যাটরা সম্পূর্ণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যেই মামদানির নির্বাচিত মেয়র অফিসে ফেডারেল অর্থায়ন বন্ধের হুমকি দিয়েছে, যা তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। পাশাপাশি দলীয় অভ্যন্তরে কৌশলগত মতভেদের বিষয়টিও এখনো মীমাংসিত হয়নি।

তবে সব চ্যালেঞ্জের মাঝেও মামদানির এই জয় মার্কিন রাজনীতিতে এক নতুন বার্তা দিয়েছে—বাস্তব সমস্যা ও জনগণের জীবনযাত্রা কেন্দ্রিক প্রচারণাই হতে পারে জনপ্রিয়তাহীন রাজনীতির বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার চাপের কারণে মানুষের মধ্যে যে হতাশা তৈরি হয়েছে, মামদানি তার জবাব দিয়েছেন আশার বার্তা দিয়ে।

তার এই সাফল্য নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, আদর্শের সঙ্গে বাস্তবতাকে মিলিয়ে, সাহস ও দৃঢ়তায় এগিয়ে গেলে পরিবর্তনের পথ তৈরি হয়। ডেমোক্র্যাটরা এখন চাইলে সেই পথ ধরে এগিয়ে যেতে পারে—একটি নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনার পথে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments