যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামায় বসবাসকারী এক অভিবাসীকে আদালতের নির্দেশ জারির আগেই নির্বাসিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র বিভাগ। কর্তৃপক্ষের দাবি, আদালতের আদেশ পৌঁছানোর আগেই ওই ব্যক্তিকে দেশ থেকে ফেরত পাঠানো হয়, তাই আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
ঘটনাটি ঘটে যখন যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারক নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, আলাবামার ওই ব্যক্তি দেশে থাকবেন, যাতে তিনি নিজের মার্কিন নাগরিকত্ব দাবি উপস্থাপন করতে পারেন। বিচারকের মতে, তার নাগরিকত্ব দাবি “গুরুত্বপূর্ণ” এবং তা যাচাইয়ের সুযোগ পাওয়া তার অধিকার।
স্বরাষ্ট্র বিভাগের মুখপাত্র জানান, আদালতের নির্দেশ ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছানোর আগেই নির্বাসনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। “এখানে কোনো ভুল হয়নি,” বলেন বিভাগের মুখপাত্র, “আদালতের আদেশ তখনও আমাদের হাতে পৌঁছায়নি।”
আইনি নথিতে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি থাইল্যান্ডের একটি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং প্রায় পুরো জীবন যুক্তরাষ্ট্রেই কাটিয়েছেন। তার বাবা একজন স্বাভাবিকীকৃত মার্কিন নাগরিক, যিনি লাওসের নাগরিক ছিলেন। এই সূত্রেই তিনি নিজেকে মার্কিন নাগরিক হিসেবে দাবি করেছেন।
আইনি সহায়তা সংগঠনগুলো, বিশেষ করে একটি নাগরিক অধিকার সংস্থা, বিচারকের কাছে আবেদন করেছে তাকে অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার জন্য। সংস্থাটির আইনি পরিচালক বলেছেন, “ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সরাসরি ফেডারেল আদালতের আদেশ অমান্য করেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল যখন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতিকে কেন্দ্র করে সরকারের সঙ্গে আদালতের দ্বন্দ্ব প্রায় নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এর আগে কয়েকবার মার্কিন নাগরিক হয়েও কিছু মানুষ ভুলবশত নির্বাসিত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
আইনি দলিল থেকে জানা যায়, আলাবামায় বসবাসকারী ওই ব্যক্তিকে ২০০৬ সালে দেশত্যাগের আদেশ দেওয়া হয়, কারণ তিনি তার গ্রিন কার্ড হারিয়েছিলেন এবং এর আগে দুটি ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল অবৈধ অস্ত্র রাখার অপরাধ এবং আঘাতের ঘটনা। তবে গত দুই দশক ধরে তিনি আর কোনো অপরাধে জড়াননি বলে তার পরিবারের দাবি।
তার স্ত্রী জানান, স্বামী এখন একজন পরিশ্রমী মানুষ, যিনি প্রধানত এয়ার কন্ডিশনিং এবং হিটার ইনস্টলেশনের কাজ করতেন। “তিনি মদও খান না,” বলেন তিনি।
অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্র বিভাগের মুখপাত্র দাবি করেছেন, “দীর্ঘ সময় পর সে নিজেকে মার্কিন নাগরিক দাবি করে দেশে থাকার শেষ চেষ্টা করেছে, কিন্তু এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।”
আদালতের নথি অনুযায়ী, নির্বাসনের আগে তিনি নিজেই আদালতে একটি জরুরি আবেদন করেন যাতে নির্বাসন সাময়িকভাবে স্থগিত করা যায়। বিচারক ওই আবেদন গ্রহণ করে ১৪ দিনের জন্য নির্বাসন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। তবে সেই নির্দেশ কার্যকর হওয়ার আগেই তাকে দেশ থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
নির্বাসনের আগে ওই ব্যক্তিকে লুইজিয়ানার একটি নতুনভাবে খোলা ইমিগ্রেশন আটক কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। নির্বাসনের পর তার স্ত্রী জানান, কয়েকদিন পর তারা জানতে পারেন যে তিনি বর্তমানে লাওসে আছেন—একটি দেশ যেখানে তিনি আগে কখনো যাননি।
এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় আদেশ কার্যকর ও যোগাযোগ ব্যবস্থার জটিলতা নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন ঘটনা কেবল মানবিক দিক থেকেই নয়, আইনি দৃষ্টিতেও গভীর উদ্বেগের কারণ।



