যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে অবস্থিত হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ক্যাম্পাসে হ্যালোইন নাইটে ঘটে যাওয়া একটি বিস্ফোরণের ঘটনায় দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযোগ করা হয়েছে, তারা ক্যাম্পাসের একটি ভবনে অনধিকার প্রবেশ করে বাণিজ্যিক ফায়ারওয়ার্ক ব্যবহার করে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল।
ঘটনাটি ঘটে শনিবার ভোরে, যখন বোস্টনের আশপাশের কলেজগুলোতে হ্যালোইন পার্টি চলছিল। ফেডারেল প্রসিকিউটরদের অভিযোগ অনুযায়ী, দুই অভিযুক্ত তরুণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরতে এসে হার্ভার্ডের গবেষণাগার-সংবলিত একটি ভবনে ঢুকে সেখানে আগুন ও বিস্ফোরণ ঘটায়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, তারা একটি বড় আকারের আতশবাজি বা ফায়ারওয়ার্ক ব্যবহার করে বিস্ফোরণ ঘটায়, যা ভবনের চতুর্থ তলায় স্থাপিত এক ল্যাবরেটরির একটি লকারে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের সময় ভবনের ওই অংশে নিউরোবায়োলজি বিভাগের গবেষণা কার্যক্রম চলত। সৌভাগ্যবশত, ঘটনায় কেউ আহত হয়নি এবং ক্ষয়ক্ষতিও সীমিত ছিল।
ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (FBI) বোস্টন ডিভিশনের প্রধান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো জায়গায় একটি বিস্ফোরক ডিভাইস ব্যবহার করা কোনোভাবেই মজা নয়। এটি গুরুতর অপরাধ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।”
অন্যদিকে, প্রসিকিউশন পক্ষের এক কর্মকর্তা বলেন, “জনসাধারণ যখন জানতে পারে যে কোনো বিস্ফোরণ ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হয়েছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ বেড়ে যায়।”
তদন্ত দল জানিয়েছে, ঘটনার আগে রাত ২টার কিছু পর সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় দুই মুখোশধারী তরুণ হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ক্যাম্পাসের দিকে হাঁটছে। ফুটেজে দেখা যায় তারা রোমান ক্যান্ডেল আতশবাজি জ্বালাচ্ছে, একটি চেইন-লিংক ঘেরা এলাকা পেরিয়ে নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশ করছে এবং স্ক্যাফোল্ড বেয়ে ছাদের দিকে উঠছে। কিছু সময় পর হার্ভার্ড পুলিশের কাছে ভবনের চতুর্থ তলায় বিস্ফোরণের কারণে অগ্নিসংকেত আসে।
বিস্ফোরণের পর ওই দুই তরুণ দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে নজরদারি ক্যামেরায় তাদের বোস্টনের ওয়েন্টওর্থ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির এলাকায় দেখা যায়। তদন্তকারীরা জানায়, তারা সেখানেই কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা করে এবং ঘটনাটির বিষয়ে গর্ব করে কথা বলে।
আদালতে হাজিরার পর দুই তরুণকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাদের আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এটি ইচ্ছাকৃত কোনো ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ঘটানো হয়নি বরং তরুণ বয়সের বোকামির ফল। একজন আইনজীবী বলেন, “ওরা দুজনই শিক্ষার্থী, কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই। বিষয়টি বড় কোনো অপরাধ নয়।”
তবে তদন্তকারীরা বলছেন, বিস্ফোরণের ঘটনাটি খুবই গুরুতর এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো জায়গায় এ ধরনের কাজ কোনোভাবেই হালকাভাবে নেওয়া যায় না। তারা আরও জানিয়েছেন, তদন্ত এখনো চলছে এবং ঘটনার উদ্দেশ্য ও ব্যবহৃত ফায়ারওয়ার্কের ধরন নিয়ে ফরেনসিক বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, তারা শিক্ষার্থী ও কর্মীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন কোনো “মজা করার” কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে আরও কঠোরভাবে দেখা হবে, যাতে অন্যরা এই ধরনের কাজের ঝুঁকি নিতে না পারে।



