রাজধানী ঢাকায় কয়েক দিনের বিরতির পর আবারও দেখা দিয়েছে পুরোনো দূষণের চিত্র। গত শনিবার রাজধানীতে ৯ ঘণ্টায় ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। শুধু ঢাকাই নয়, আশপাশের বিভিন্ন এলাকাতেও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি সাধারণত বায়ুদূষণ কমিয়ে বাতাসকে কিছুটা পরিশুদ্ধ করে। ফলে বৃষ্টির পর রোববার ও সোমবার ঢাকার বায়ুর মান তুলনামূলক ভালো ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকেই সেই অবস্থা আর টিকেনি—বাতাস আবারও দূষিত হয়ে পড়েছে।
আজ সকালে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের ১২৭টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল ১১তম। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আইকিউএয়ারের তথ্যে দেখা গেছে, ঢাকার গড় বায়ুমান সূচক (AQI) ছিল ১১০। এই মান ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ক্ষতিকর’ হিসেবে বিবেচিত। এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত শিশু, বয়স্ক, অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং আগে থেকে শ্বাসযন্ত্র বা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা।
বাতাসের মান নির্ধারণে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার নিয়মিতভাবে তথ্য প্রকাশ করে থাকে। তাদের তৈরি তাৎক্ষণিক সূচক শহরের বাতাস কতটা দূষিত বা বিশুদ্ধ তা জানায়, এবং মানুষকে সতর্ক করে সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে।
আজকের সূচকে দেখা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর, যার স্কোর ৩৭২। দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারতের রাজধানী দিল্লি, স্কোর ২৬৭।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহরেও বায়ুর মান দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এমনও দেখা যায়, কিছু দিনে ঢাকাকে ছাড়িয়ে অন্য শহরগুলোতে দূষণের মাত্রা আরও বেশি হয়।
দূষণ থেকে সুরক্ষায় যা করা উচিত:
আজকের মতো দিনে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর মানুষদের জন্য বাইরে যাওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, বাইরে বের হলে অবশ্যই ভালো মানের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। খোলা জায়গায় ব্যায়াম বা দৌড়ানো থেকে বিরত থাকাই নিরাপদ। ঘরের জানালা যতটা সম্ভব বন্ধ রাখতে হবে, যাতে বাইরের দূষিত বাতাস ভেতরে না আসে।
বায়ুদূষণের ক্ষতি:
বায়ুদূষণ এখন বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত আয়ুর সবচেয়ে বড় বাহ্যিক হুমকি হিসেবে বিবেচিত। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর্যন্ত কমছে। এই প্রতিবেদনটি ২০২৫ সালের জন্য প্রকাশ করেছে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট (ইপিআই)।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ হিসেবে চিহ্নিত। বায়ুদূষণের এই ভয়াবহতা জনস্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে—বিশেষ করে শিশু, প্রবীণ এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের জন্য এটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অবস্থার উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কঠোর নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা জরুরি। পাশাপাশি নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে, যাতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে দূষণ কমাতে ভূমিকা রাখা যায়।
নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে এখনই প্রয়োজন সবার সম্মিলিত উদ্যোগ।



