Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeসম্পাদকীয়ব্রিটিশ রাজপরিবারে অস্থিরতা: রাজপুত্রের পদত্যাগে শুরু নতুন অধ্যায়

ব্রিটিশ রাজপরিবারে অস্থিরতা: রাজপুত্রের পদত্যাগে শুরু নতুন অধ্যায়

ব্রিটিশ রাজপরিবারের একসময়কার রাজপুত্র এখন আর সেই উপাধিতে পরিচিত নন। রাজা কর্তৃক ঘোষিত সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিনি এখন থেকে “অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন উইন্ডসর” নামে পরিচিত হবেন। বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়, তিনি তাঁর ৩০ কক্ষের রাজকীয় বাসভবন ত্যাগ করছেন। রাজপরিবার আশা করছে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বিতর্ক ও লজ্জাজনক অধ্যায়ের একটি সমাপ্তি ঘটবে।

এই বিতর্কের সূত্রপাত তাঁর অতীত সম্পর্ক থেকে, বিশেষ করে এক প্রভাবশালী অপরাধীর সঙ্গে বন্ধুত্ব ও এক কিশোরী মেয়ের ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগে। যদিও তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন, তবে তাঁর আচরণ এবং পূর্ববর্তী মিথ্যাচারের কারণে রাজপরিবারকে গভীর সংকটে পড়তে হয়েছে। রাজপ্রাসাদের বিবৃতি অনুযায়ী, তাঁর বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপগুলো “প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা” হিসেবে বিবেচিত।

মূল সমস্যা শুরু হয় যখন প্রকাশ পায় যে, তিনি ২০১০ সালে বিতর্কিত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করার দাবি করলেও বাস্তবে তা সত্য ছিল না। তাঁর ব্যক্তিগত আচরণ, প্রভাবশালী বিতর্কিত ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং আত্মম্ভরী মানসিকতা রাজপরিবারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করে। পরবর্তীতে এক নারী ভুক্তভোগীর আত্মজীবনীতে এই ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশিত হলে জনমনে ক্ষোভ আরও বাড়ে।

বর্তমানে তিনি রাজপ্রাসাদের আওতাধীন সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ হয়ে রাজমুকুটের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন নরফোকের স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটে থাকবেন। তবে এর খরচ রাজা নিজে বহন করবেন বলে জানা গেছে। রাজপ্রাসাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজপরিবার ভুক্তভোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল—যদিও অভিযুক্তদের বিষয়ে কোনো সরাসরি মন্তব্য করা হয়নি।

২০২২ সালে ঐ নারীকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ১২ মিলিয়ন পাউন্ড প্রদান করা হয়, যার অর্থের উৎস হিসেবে প্রয়াত রানির নাম উঠে আসে। যদিও এতে কোনো দায় স্বীকার করা হয়নি।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন উইন্ডসরের অতীত সম্পর্ক এবং যৌন পাচারকারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি এই অধ্যায়কে সহজে সমাপ্ত হতে দেবে না। ছয় বছর আগে এক সাক্ষাৎকারের পর থেকেই তিনি জনজীবন থেকে সরে যান। কিন্তু তবুও তাঁর আচরণ নিয়ে বিতর্ক ও ক্ষোভ রাজপরিবারকে ঘিরে রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মামলার নথি প্রকাশিত হলে আরও নতুন তথ্য সামনে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক ব্রিটিশ মন্ত্রী জানিয়েছেন, যদি তদন্ত পুনরায় শুরু হয়, তবে অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন উইন্ডসরের সহযোগিতা প্রত্যাশিত। যদিও সংশ্লিষ্ট নারী এপ্রিলে আত্মহত্যা করেছেন, তাঁর পরিবার এখনো “ন্যায়বিচারের দাবি” অব্যাহত রেখেছে।

অন্যদিকে, সরকারের কিছু সদস্য এখনো রাজাকে এই সংকট নিরসনে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। রাজকীয় সম্পত্তি ব্যবহারের স্বচ্ছতা নিয়েও সংসদীয় কমিটি প্রশ্ন তুলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই চাপই হয়তো রাজাকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে। তবে রাজা রাজপরিবারের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বাড়ানোর বিষয়ে আগ্রহী নন বলেই মনে করছেন অনেকে।

এই ঘটনার মাধ্যমে অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন উইন্ডসর সেই সমস্ত বিষয়গুলোর প্রতীক হয়ে উঠেছেন, যা রাজপরিবারের ভাবমূর্তি রক্ষায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়—অহংকার, প্রিভিলেজ এবং জনসাধারণ থেকে বিচ্ছিন্নতা। রাজা তাঁর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই নেতিবাচক প্রভাব কাটানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, এটি অনেক দেরিতে নেওয়া পদক্ষেপ।

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখিয়ে দিয়েছে, ব্রিটেনের রাজপরিবার ও জনগণের সম্পর্ক এখন পুনর্মূল্যায়নের মুখে। হয়তো সময় এসেছে—রাজতন্ত্রের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করার।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments