যশোরের অভয়নগর উপজেলার মশিয়াহাটী বাজারে গভীর রাতে একটি জুয়েলারি দোকানে সংঘটিত হয়েছে সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনা। রবিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে “সৌখিন জুয়েলার্স” নামে একটি স্বর্ণের দোকানে এই ভয়াবহ ডাকাতি সংঘটিত হয়। ঘটনার সময় বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, আর স্থানীয়রা জানায়—রাতের অন্ধকারে ১০ থেকে ১২ জনের একটি মুখোশধারী দল অস্ত্র হাতে পুরো বাজারে ভয় সৃষ্টি করে দোকানে প্রবেশ করে।
দোকানটির মালিক, যিনি মনিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া গ্রামের বাসিন্দা, জানিয়েছেন—সেদিন রাত ১০টার দিকে দোকান বন্ধ করে তিনি বাড়ি ফিরে যান। রাত তিনটার দিকে হঠাৎ তার ফোনে একটি কল আসে, যেখানে অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয়, তার দোকানে ডাকাতি হচ্ছে। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে তিনি রাতেই বাইরে বের হতে সাহস পাননি। সকালে দোকানে গিয়ে তিনি দেখতে পান, লকার ভাঙা এবং ভেতরের সব স্বর্ণ-রুপার গয়না লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাতরা।
মালিকের দাবি অনুযায়ী, লকারে ছিল প্রায় ২ ভরি স্বর্ণালংকার এবং ২৪ ভরি রুপার গয়না—যার বাজারমূল্য আনুমানিক চার লাখ টাকার বেশি। ডাকাত দলটি এসব গয়না লুট করে নিয়ে যায়।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, রাত দুইটার দিকে বাজারে আসে মুখোশধারী একদল ডাকাত। তাদের প্রত্যেকের হাতে অস্ত্র ছিল। তারা বাজারের দোকানদার ও স্থানীয় সাতজনকে—including একজন নারী—অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখে। তাদের হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে মুখে টেপ লাগিয়ে ফেলে রাখা হয়, যাতে কেউ চিৎকার করতে না পারে। এরপর ডাকাত দলটি সৌখিন জুয়েলার্সের কলাপসিবল গেট ও শাটারের তালা ভেঙে দোকানে প্রবেশ করে এবং লকার খুলে মূল্যবান গয়না নিয়ে যায়।
ভোর চারটা পর্যন্ত এই ডাকাতি চলে বলে জানান স্থানীয়রা। এ সময় শব্দ শুনে বাইরে আসেন এলাকার বাসিন্দা এক দম্পতি। ডাকাতরা তাদেরও অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখায় এবং মহিলার গলা থেকে একটি সোনার হার খুলে নেয়।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে কাছের সুজাতপুর গ্রামের এক কিশোর জানায়—রাত দুইটার পর সে বাজারের দিকে যাচ্ছিল, তখনই ডাকাতরা তাকে ধরে ফেলে। তার দুই হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়। পরে ডাকাতরা চলে গেলে সে কোনোভাবে হাত খুলে নিজে মুক্ত হয় এবং অন্যদের বাঁধন খুলে দেয়।
এ ঘটনায় অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন—ঘটনাটি ডাকাতি না চুরি, সেটি এখনো তদন্তাধীন। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন।
পুরো ঘটনার পর মশিয়াহাটী বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে রাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত শুরু করেছে, তবে এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো—গ্রামীণ বাজারে রাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং সশস্ত্র ডাকাতদলের সাহসী উপস্থিতি এখন বড় উদ্বেগের বিষয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দ্রুত পুলিশি টহল ও সিসিটিভি নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।



