Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeঅন্যান্যচিকাগোর বাসিন্দাদের প্রতিবাদ: এলাকায় প্রবেশ ঠেকাতে অভিবাসন বাহিনীর বিরুদ্ধে ঐক্য

চিকাগোর বাসিন্দাদের প্রতিবাদ: এলাকায় প্রবেশ ঠেকাতে অভিবাসন বাহিনীর বিরুদ্ধে ঐক্য

চিকাগোর এক আবাসিক এলাকায় হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ল ধোঁয়া। অভিবাসন কর্মকর্তাদের নিক্ষেপ করা টিয়ার গ্যাসের ক্যান ফুটপাথে আঘাত হানতেই গোটা ব্লক ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। ভয় ও ক্ষোভে স্থানীয় বাসিন্দারা চিৎকার করে উঠলেন — “আমরা তোমাদের চাই না! আমাদের এলাকা থেকে বের হয়ে যাও!”

৩২ বছর বয়সী এক মার্কেটিং কর্মী তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এসে প্রতিবাদে যোগ দেন। কিছুক্ষণ আগেই শুনেছিলেন, কর্মকর্তারা বেড়া টপকে এক নির্মাণ শ্রমিককে তাড়া করে গ্রেপ্তার করেছে এবং হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তুলেছে।

৪২ বছর বয়সী আরেক স্থানীয় নারী, যিনি আজীবন চিকাগোর বাসিন্দা, ফেসবুক ও টেক্সট মেসেজে খবর পেয়ে সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে যান ঘটনাস্থলে। তার ভাষায়, “আমরা সহিংস শহর নই। এটা যুদ্ধক্ষেত্র নয়। কিন্তু তারা আমাদের আতঙ্কিত করছে, উস্কে দিচ্ছে। আমরা চাই, তারা আমাদের পাড়া ছেড়ে চলে যাক। আমরা চাই, আমাদের প্রতিবেশীদের আর কেউ তুলে নিয়ে যাক না।”

পাড়া ধরে প্রতিরোধ গড়ে তোলা

চিকাগো শহরের জনসংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। বহু বছর ধরেই এই শহরটি পরিচিত পারস্পরিক সম্পর্কঘন পাড়াগুলোর জন্য। কিন্তু সম্প্রতি অভিবাসনবিরোধী অভিযানে শহরটি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আলোচনায় উঠে এসেছে।

নাগরিকরা নিজেদের পাড়া রক্ষায় একত্র হয়েছেন, যেন ব্লক ধরে ব্লক “রক্ষার অঞ্চল” তৈরি করা যায়। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তৈরি হয়েছে শত শত চ্যাটগ্রুপ, যেগুলো থেকে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ছে অভিবাসন কর্মকর্তাদের অবস্থান, ব্যবহৃত গাড়ির নাম্বার প্লেট ও চলাচলের খবর। এতে কর্মকর্তাদের অভিযান ব্যাহত হচ্ছে এবং কখনও কখনও তারা কোনো গ্রেপ্তার ছাড়াই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন বলে স্থানীয়রা দাবি করেন।

একজন সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, কর্মকর্তারা উচ্চ প্রশিক্ষিত, এবং হামলা বা শোরগোলের মাঝেও তারা পেশাদার আচরণ বজায় রাখছেন। তিনি বলেন, “আমাদের কর্মকর্তারা ভীত নন — তারা দায়িত্বশীলভাবে কাজ করছেন।”

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত চিকাগোতে ৩,০০০–এর বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার নজরদারি ও তৎপরতা

ফেসবুক ও সিগন্যাল অ্যাপে হাজার হাজার মানুষ যুক্ত হয়েছেন এই তথ্যানুসন্ধান কার্যক্রমে। কোথায় অভিযান চলছে, কোন গাড়িতে কর্মকর্তারা যাচ্ছেন—এসব তথ্য তারা একে অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করছেন। কোনো কোনো গ্রুপে সদস্যসংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে।

অচিহ্নিত গাড়িতে ঘুরে বেড়ানো অভিবাসন কর্মকর্তাদের প্রায়ই দেখা যায় নাগরিকদের দ্বারা অনুসৃত হতে — কেউ গাড়ি নিয়ে হর্ন বাজিয়ে, কেউ সাইকেল নিয়ে বাঁশি বাজিয়ে।

গত এক মাসে অন্তত পাঁচটি এলাকায় কর্মকর্তারা টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছেন, এমনকি কিছু জায়গায় সংঘর্ষে মানুষ আহত হয়েছে। এক ঘটনায় কর্মকর্তারা অন্য গাড়িকে ধাক্কা দেন, একাধিক প্রতিবাদকারীকে আটক করেন এবং তড়িৎ অস্ত্র ব্যবহার করেন। এমনকি দুটি গুলির ঘটনাও ঘটেছে, যার একটি প্রাণঘাতী।

তবে স্থানীয় হাসপাতালগুলো জানিয়েছে, তারা প্রতিবাদকারীদের মধ্যে কোনো গুরুতর আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেয়নি।

বিচার বিভাগের নির্দেশনা

গত মাসে এক ফেডারেল বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন, কর্মকর্তাদের দেহে ক্যামেরা পরিধান করতে হবে এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহারের আগে অন্তত দুটি সতর্কবার্তা দিতে হবে। এই মামলাটি দায়ের করেছিলেন কয়েকজন সাংবাদিক, ধর্মীয় নেতা ও প্রতিবাদকারী।

মহল্লায় মহল্লায় সতর্ক পাহারা

ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর, আরেকটি এলাকায় অভিভাবকরা স্থানীয় স্কুলের সামনে পাহারা দেন, খবর পান যে অভিবাসন কর্মকর্তারা আশেপাশে অবস্থান করছে। কিছু অভিভাবক গাড়িগুলো পরীক্ষা করতে অস্থায়ী চেকপয়েন্টও স্থাপন করেন।

অন্যদিকে, ল্যাটিনো সম্প্রদায় অধ্যুষিত এক এলাকায় দোকান ও বাড়ির মালিকরা দরজা বন্ধ করে দেন। পরে তারা একত্র হয়ে কর্মকর্তাদের গাড়ি ঘিরে ফেলেন যাতে কেউকে গ্রেপ্তার করতে না পারে। স্থানীয় এক কমিউনিটি নেতার ভাষায়, “আজ আমাদের কমিউনিটি নিজেদের রক্ষা করেছে।”

কিছু প্রতিবাদকারী হেলিকপ্টার নজরদারির দিকেও নজর রাখেন। তারা জানান, এই ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারগুলো ট্র্যাকিং অ্যাপে দেখা যায় না এবং সাধারণত এগুলো অভিযান শুরুর সংকেত।

এক সকালে, এক আইনজীবী নিজ বাড়ি থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন যখন শুনলেন, মুখোশ পরা কর্মকর্তারা একজন শ্রমিক ও এক প্রতিবাদকারীকে তুলে নিয়ে গেছে। মুহূর্তেই স্থানীয় বাসিন্দারা বেরিয়ে পড়েন—কেউ ঘুমের পোশাকে, কেউ হ্যালোইন কস্টিউমে।

তিনি বলেন, “সবাই চিৎকার করছিল, সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল অবস্থা ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই কর্মকর্তারা টিয়ার গ্যাস ছুড়ে এলাকা ত্যাগ করে।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments