যুক্তরাষ্ট্রে আগামী বছরের খাদ্য নির্দেশিকায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান এক আলোচনায় জানিয়েছেন, নতুন ডায়েট গাইডলাইন হবে “কমন সেন্স ভিত্তিক” এবং এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, পূর্ণচর্বিযুক্ত দুধ, ভালো মানের মাংস, ও তাজা শাকসবজির গুরুত্ব আরও বেশি তুলে ধরা হবে।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত কম-চর্বিযুক্ত খাদ্যের পরামর্শ এখন “পুরনো ধারার” হয়ে গেছে। এমনকি কিছু ফাস্টফুড রেস্টুরেন্ট যারা ভেজিটেবল অয়েলের বদলে বিফ ট্যালো (গরুর চর্বি) ব্যবহার করছে, তাদেরও তিনি প্রশংসা করেছেন। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বিফ ট্যালোতে প্রায় ৫০ শতাংশ স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বাড়ায়, যা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকসহ নানা কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই গত ৪৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য নির্দেশিকায় এই ধরনের ফ্যাট কম খাওয়ার পরামর্শই দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য ও কৃষি বিভাগ যৌথভাবে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর খাদ্য নির্দেশিকা হালনাগাদ করে। ২০২৫ সালের নতুন গাইডলাইন এখনো প্রকাশ হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের উপদেষ্টা কমিটি গত বছর যে প্রতিবেদন জমা দেয়, তাতে আগের নির্দেশনা বহাল রাখার পরামর্শই দেওয়া হয়েছিল — অর্থাৎ দৈনন্দিন ক্যালোরির ১০ শতাংশের কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ করা উচিত এবং তা পরিবর্তে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (বিশেষ করে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট) দিয়ে প্রতিস্থাপন করা ভালো।
এই কমিটি আরও বলেছিল, উদ্ভিজ্জ উৎস যেমন তেলজাতীয় খাদ্য, বাদাম, বীজ ও মাছের মতো উৎস থেকে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ করা সবচেয়ে উপকারী।
তবে সাম্প্রতিক বক্তব্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে, স্বাস্থ্য ও কৃষি বিভাগ হয়তো কমিটির এই পরামর্শ উপেক্ষা করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে পুষ্টিবিদরা নতুন নির্দেশনা নিয়ে অপেক্ষায় আছেন।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট সাধারণত ঘরের তাপমাত্রায় কঠিন অবস্থায় থাকে। এগুলো পাওয়া যায় মাখন, চর্বি, গোশত, ডিম, পূর্ণচর্বিযুক্ত দুধ, নারিকেল ও পাম তেলে। বিপরীতে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট তরল অবস্থায় থাকে এবং পাওয়া যায় কানোলা, কর্ন, সয়াবিন, সূর্যমুখী তেল, মাছ, বাদাম ও টোফুতে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মোট খাদ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের ৪২ শতাংশ আসে প্রসেসড ফুড ও তেলজাত পণ্য থেকে, ২৮ শতাংশ আসে দুগ্ধজাত খাবার থেকে, আর ২২ শতাংশ মাংস থেকে।
বিশেষজ্ঞ কমিটির পর্যালোচনায় দেখা গেছে, স্যাচুরেটেড ফ্যাট কমিয়ে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বাড়ালে “খারাপ” এলডিএল কোলেস্টেরল কমে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। তারা আরও বলেন—
-
মাখনের পরিবর্তে উদ্ভিজ্জ তেল বা স্প্রেড ব্যবহার করলে কোলেস্টেরল কমে।
-
লাল মাংসের পরিবর্তে শস্য, সবজি ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
-
সাদা মাংসের পরিবর্তে লাল মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য দেখা যায় না।
তবে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের প্রভাব নিয়ে এখনো পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি। তাই আপাতত কমিটি পরামর্শ দিয়েছে কম-চর্বিযুক্ত বা ফ্যাট-ফ্রি দুধ, দই ও চিজ খাওয়ার।
শিশুদের ক্ষেত্রেও স্যাচুরেটেড ফ্যাট নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শৈশব থেকেই শরীরে চর্বি জমা শুরু হয়। যদিও শিশুর দ্রুত বৃদ্ধি বজায় রাখতে কিছুটা ফ্যাট প্রয়োজন, তবুও বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর পরিমাণ কমানো উচিত।
পুষ্টিবিদদের মতে, আলাদা পুষ্টি উপাদান নয় বরং সম্পূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বদল করাই সবচেয়ে কার্যকর। বেশি ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া, প্রসেসড মাংস কমানো এবং লাল মাংস খেলে পরিমাণে সীমিত রাখা জরুরি।
তারা আরও বলেন, মাখন, নারিকেল তেল ও পাম তেলের পরিবর্তে কর্ন, সয়াবিন, বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করা ভালো বিকল্প হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু মানুষ সিড অয়েল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বলছে, এসব তেল আসলে হৃদরোগ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে ভূমধ্যসাগরীয় (Mediterranean) ডায়েট, DASH ডায়েট বা MIND ডায়েট কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
নতুন নির্দেশিকা প্রকাশিত হলে তাতে যাই বলা হোক না কেন, স্বাস্থ্যসচেতন জীবনযাপনের গুরুত্ব সম্পর্কে সবাইকে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন—এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।



