এক সময়ের বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম উজ্জ্বল নাম নেইমার জুনিয়র, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চোটের কারণে বারবার ছিটকে যাচ্ছেন মাঠ থেকে। কাতার বিশ্বকাপের পর থেকেই একের পর এক ইনজুরিতে ভুগছেন এই ব্রাজিলিয়ান তারকা। মাঠে ফিরেও বেশিদিন টিকতে পারছেন না, যেন বারবার নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে তাকে।
সর্বশেষ তিনি চোট পান গত ১৮ সেপ্টেম্বর, যখন অনুশীলনের সময় ঊরুতে আঘাত পান। সেই ইনজুরির পর থেকে মাঠের বাইরে ছিলেন দীর্ঘ ৪৩ দিন। এই সময় তার দল খেলেছে মোট ৯টি ম্যাচ—যেগুলোতে অনুপস্থিত ছিলেন নেইমার। অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে, তিনি আবারও ফিরেছেন মাঠে।
গতকাল রাতে ব্রাজিলিয়ান লিগে ফোর্তালেজার বিপক্ষে নিজের ক্লাব সান্তোসের হয়ে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামেন তিনি। ম্যাচের ৬৭ মিনিটে সতীর্থ মিডফিল্ডার ভিক্টর হুগোর পরিবর্তে দেখা যায় নেইমারকে। যদিও পুরো ম্যাচ খেলেননি, মাত্র ২৩ মিনিট ছিলেন মাঠে, কিন্তু এই সময়টুকুতেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন তিনি।
মাঠে নামার পর মুহূর্তেই খেলার গতি ও ছন্দে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সবচেয়ে আলোচিত মুহূর্তটি আসে ম্যাচের যোগ করা সময়ের একেবারে শেষে। বক্সের ঠিক বাইরে মাঝামাঝি জায়গায় ফ্রি–কিকের সুযোগ পায় সান্তোস। শট নিতে দাঁড়িয়ে হঠাৎ থেমে যান নেইমার, তারপর শট নেন। যদিও গোল হয়নি, তবে দর্শকরা বুঝতে পারেন পুরোনো সেই আত্মবিশ্বাসী নেইমার যেন আবার ফিরছেন মাঠে।
ফ্রি–কিক ছাড়া পুরো ২৩ মিনিটে নেইমার ছিলেন প্রাণবন্ত। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তিনি দুটি শট নিয়েছেন, তিনটি সুযোগ তৈরি করেছেন এবং চারবার ড্রিবলের চেষ্টা করে সফল হয়েছেন দু’বার। সংখ্যাগুলো যতই ছোট মনে হোক, খেলার মাঠে নেইমারের উপস্থিতি ছিল স্পষ্টভাবে প্রভাবশালী।
বল নিয়ন্ত্রণ, নিখুঁত পাস, মাঝে মাঝে চেনা ঝলক—সব মিলিয়ে মনে হয়েছে পুরনো সেই নেইমারই যেন ফিরে এসেছেন। সান্তোসের সমতাসূচক গোলের আগের পাসটিও আসে তার পা থেকে। যদি সেই বল আত্মঘাতী না হতো, তাহলে অ্যাসিস্টের তালিকায় নাম উঠত নেইমারেরই।
তার প্রত্যাবর্তনের এই ম্যাচটি শুধুই ২৩ মিনিটের হলেও, এতে দেখা গেছে মনোবল ও আত্মবিশ্বাসে ভরপুর এক নেইমারকে। যিনি জানেন, ফিট অবস্থায় তিনি দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
এই নেইমারকে দেখে নিশ্চয়ই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচ, যিনি আগে থেকেই বারবার বলেছেন—একজন ফিট নেইমার তার দলের জন্য অপরিহার্য। গত রাতের খেলায় সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন দেখা গেছে পুরোপুরি।
তবে বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে—এই ছন্দ ও ফিটনেস কি দীর্ঘস্থায়ী হবে? বারবার ইনজুরিতে জর্জরিত ক্যারিয়ারে এটি যেন এক অমীমাংসিত প্রশ্ন। তবুও, নেইমারের এমন প্রত্যাবর্তন ভক্তদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।



