প্রবল শক্তিশালী হারিকেন মেলিসা আঘাত হানার পর জামাইকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের নামী ভ্রমণ ও পর্যটন প্রতিষ্ঠানগুলো। গত ২৮ অক্টোবর ক্যাটাগরি–৫ মাত্রার এই ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় দ্বীপদেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে। এখন স্থানীয়দের পাশে থেকে পুনর্গঠন ও ত্রাণ সহায়তায় এগিয়ে এসেছে একাধিক আন্তর্জাতিক কোম্পানি।
প্রথমেই বড় অঙ্কের সহায়তা ঘোষণা করেছে একটি শীর্ষ ক্রুজ কর্পোরেশন ও এর সহযোগী ফাউন্ডেশন। তাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একটি নামকরা মার্কিন পেশাদার বাস্কেটবল দল। তিন পক্ষের সম্মিলিত উদ্যোগে এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়া হয়েছে জামাইকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য। এই অর্থ সহায়তা যাবে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা “ডাইরেক্ট রিলিফ”-এর মাধ্যমে, যারা ইতিমধ্যে চিকিৎসা সামগ্রী ও জরুরি সহায়তা পাঠাতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত তারা প্রাথমিক চিকিৎসা ও ত্রায়াজ সামগ্রীসহ শতাধিক কিট প্রস্তুত করেছে।
কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী জানিয়েছেন, “জামাইকার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বহু পুরনো। তাদের আন্তরিকতা ও অতিথিপরায়ণতা আমাদের যাত্রী ও কর্মীদের কাছে ভোলার নয়। তাই এই বিপর্যয়ে আমরা তাদের পাশে আছি এবং থাকব।”
অন্যদিকে, জামাইকার বিখ্যাত একটি রিসোর্ট চেইনের সমাজসেবা সংস্থা স্যান্ডালস ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। সংস্থাটি খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, জরুরি সামগ্রী ও পুনর্গঠনের কাজ পরিচালনা করছে। তাদের উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের জীবনযাত্রা দ্রুত স্বাভাবিক করা এবং দীর্ঘমেয়াদি পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করা। উল্লেখ্য, রিসোর্ট গ্রুপটির জামাইকায় আটটি রিসোর্ট রয়েছে, যা এখন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সহায়তার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
একইভাবে, অপর একটি ক্রুজ লাইনও অর্থ সহায়তায় যুক্ত হয়েছে। তাদের জনপ্রিয় ফান্ডরেইজিং ইভেন্ট “অন ডেক ফর আ কজ”–এর মাধ্যমে জামাইকার পুনর্গঠনে তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরবর্তী কয়েকটি ইভেন্টের সমস্ত অর্থ এই মানবিক উদ্যোগে ব্যয় করা হবে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি শীর্ষ এয়ারলাইনস সংস্থা পুনরায় জামাইকা ফ্লাইট চালু করেছে। প্রথম দুটি ফ্লাইটেই পাঠানো হয়েছে ১,৬০০ পাউন্ড ত্রাণ সামগ্রী, যার মধ্যে ছিল পানি, ব্যাটারি ও ক্যানজাত খাদ্য। একই সঙ্গে ত্রাণকর্মী ও অতিরিক্ত সামগ্রীও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের সদস্যরা এখন পর্যন্ত প্রায় ১.২ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে, যা রেড ক্রসের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
শিক্ষা ও শিশু উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা রকহাউস ফাউন্ডেশন গঠন করেছে বিশেষ পুনরুদ্ধার তহবিল। জামাইকার সাভান্না লা মার শহরে তাদের নির্মিত ইনক্লুসিভ স্কুলটি এই ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিশু, শিক্ষক ও তাদের পরিবারগুলো এখন কঠিন সময় পার করছে, আর সেই পুনর্গঠনে ফাউন্ডেশনটি সরাসরি সহায়তা দিচ্ছে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক ভ্রমণ সংস্থা ইন্টারনোভা ট্রাভেল গ্রুপ তাদের ফ্যামিলি বন্ডস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিশেষ ফান্ডরেইজিং আয়োজন করছে, যা স্যান্ডালস ফাউন্ডেশনের পুনর্গঠন কার্যক্রমে সহায়তা করবে। সংগঠনটি জানায়, তারা প্রতিটি অনুদানের সমপরিমাণ অর্থ নিজেরাও মিলিয়ে দেবে, সর্বোচ্চ ১৫,০০০ ডলার পর্যন্ত।
একই সময়ে, আরেকটি পরিচিত ক্রুজ কোম্পানি ঘোষণা করেছে ১ লাখ ডলার পর্যন্ত সহায়তা প্রদান। এর মধ্যে অর্ধেক অর্থ সরাসরি রেড ক্রসে দেওয়া হবে, আর বাকি অর্ধেক কর্মী ও জনসাধারণের অনুদানের বিপরীতে সমপরিমাণ সহায়তা হিসেবে যুক্ত করা হবে।
এইসব মানবিক উদ্যোগ প্রমাণ করে যে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তায় ভ্রমণ শিল্প কেবল ব্যবসার বাইরে গিয়েও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারে। জামাইকার মানুষদের পাশে থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা বিশ্ব মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।



